
যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণে অবস্থিত ফাতিমাতুজ্জোহরা নামের কওমি মহিলা মাদরাসাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হোস্টেলে ছাত্রীদের শোবার কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের অভিযোগের পর শনিবার (১২ এপ্রিল) স্থানীয় প্রশাসন ও কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের যৌথ সিদ্ধান্তে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মাদরাসাটি বন্ধের পাশাপাশি শনিবারের মধ্যে সব ছাত্রীকে পরিবারের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ভবিষ্যতে মাদরাসাটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয়েছে।শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, বৈঠকে কওমি বোর্ডের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল কামির যশোরীসহ ৩০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। মাদরাসার পরিচালক মাওলানা তরিকুল ইসলাম ঘটনায় নিজের ভুল স্বীকার করে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান বলেন, কওমি মাদরাসার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় দুই শিক্ষক থাকেন। ওপরের চারটি তলায় আবাসিক থেকে মেয়েরা লেখাপড়া করে। মেয়েদের শোবারকক্ষে দুটি করে নাইট ভিশন ক্যামেরা স্থাপন করা ছিল। ওই ক্যামেরার মনিটর শিক্ষকের কক্ষে ছিল। নারী পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে এগুলো জব্দ করা হয়েছে। এক মাসের ফুটেজের রেকর্ড আছে। সেগুলো যাচাই–বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মেয়েদের শোবার ঘরে ক্যামেরা স্থাপন করে তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা খর্ব করা হয়েছে। এটা কেউ করতে পারেন না।মাদরাসাটিতে ছাত্রীদের কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যাপারে এক অভিভাবক যশোরের পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাজিব হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ানের নেতৃত্বে গত বুধবার ওই মাদরাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় মাদরাসার শিক্ষক আবু তাহেরকে (৪৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নিয়ে যায়।আবু তাহের এই মাদরাসার মালিক, পরিচালক ও শিক্ষক। তিনি দাবি করেন, নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তিনি যখন সিসি ক্যামেরা দেখেন, তখন তার স্ত্রী সঙ্গে থাকেন। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করেন প্রতিষ্ঠানের নারী প্রধান শিক্ষক।পুলিশ মাদরাসা থেকে ১৬টি সিসি ক্যামেরাসহ অন্যান্য যন্ত্র জব্দ করে নিয়ে যায়। যখনই ডাকা হবে, তখনই হাজির হওয়ার শর্তে পরে আবু তাহেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।পুলিশ জানায়, ওই মাদরাসায় কতজন মেয়ে থাকে, তার হিসাব মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। তবে ৪০ মেয়ের নাম পেয়েছে পুলিশ। সংখ্যাটি ১০০ থেকে ১৫০ হতে পারে।এ বিষয়ে আবু তাহের বলেন, গত বছর মাদরাসায় ১৮০ মেয়ে ভর্তি হয়েছিল। এখন ভর্তি চলছে। এ জন্য একটু কম আছে এখন। ১২ জন শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে নয়জন নারী ও তিনজন পুরুষ।