ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ , ২ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ভুল করে স্কুলে দেওয়া প্রজেক্টর ৮ মাস পর ফেরত নেওয়া হলো

শিক্ষা

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

ভুল করে স্কুলে দেওয়া প্রজেক্টর ৮ মাস পর ফেরত নেওয়া হলো

দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় এক হাজার ৬৩৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া হয় ডিসপ্লে বা স্ক্রিন, প্রজেক্টরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। কিন্তু বেশিরভাগ বিদ্যালয় এগুলো কাজে লাগায়নি। এভাবে কেটেছে আট মাস। আট মাস পর এগুলো ফেরত নিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিসপ্লে ও প্রজেক্টরসহ যাবতীয় সরঞ্জাম যাচাই-বাছাই না করে এবং অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা আসার আগেই ভুল করে বিদ্যালয়গুলোতে বিতরণ করা হয়। এজন্য বিতরণের আট মাস পর বিদ্যালয় থেকে এসব সরঞ্জাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ফেরত আনা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ও আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তিতে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে গত আগস্ট মাসে দিনাজপুর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে দুটি কোম্পানির চার হাজার ডিসপ্লে, প্রজেক্টর ও ক্যাবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আসে। এর মধ্যে একটি কোম্পানির এক হাজার ৬৫৪টি প্রজেক্টর ও সরঞ্জাম এবং আরেকটি কোম্পানির দুই হাজার ৩৪৬টি প্রজেক্টর ও সরঞ্জাম। প্রথম কোম্পানির এক হাজার ৬৫৪টি প্রজেক্টর ও সরঞ্জামের মধ্যে ১৭টি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বাকি এক হাজার ৬৩৭টি প্রজেক্টর ও সরঞ্জাম জেলার ১৩ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়। কিন্তু বিতরণের আট মাস পর হঠাৎ গত সপ্তাহে এসব সরঞ্জাম ফেরত দেওয়ার জন্য ১৩ উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক বিদ্যালয়গুলো থেকে এসব সরঞ্জাম ফেরত দেওয়া হয়।

প্রজেক্টর ফেরত নেওয়ায় পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, বিতরণের আট মাস পর এসব সরঞ্জাম ফেরত নেওয়া হলেও কোনও কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। অথচ এগুলো বিতরণের সময় কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান প্রজেক্টর দিয়ে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করেছিল। অনেক প্রতিষ্ঠান ফেলে রেখেছিল। তবে হঠাৎ এগুলো ফেরত নেওয়ায় যারা ব্যবহার করছিলেন, যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতাশ হন। কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, তাও জানানো হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট বিরল উপজেলার ১৩৯টি সরকারি বিদ্যালয়ে প্রজেক্টরসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছিল। এসব সরঞ্জাম গত ৯ ও ১০ এপ্রিল বিরল উপজেলা শিক্ষা অফিস ফেরত নেয়।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুর্শিদা খাতুন জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে এসব সরঞ্জাম ফেরত নেওয়া হয়েছে।

এর দুদিন পরে বোচাগঞ্জ উপজেলার ১২৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রজেক্টরসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সেগুলো ফেরত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিতরণকৃত প্রজেক্টর ও অন্যান্য সরঞ্জাম সব বিদ্যালয় থেকে তুলে নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে অফিসে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণে ভুল ছিল।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারি উদ্যোগে দুটি কোম্পানি থেকে চার হাজার পিস প্রজেক্টর, ডিসপ্লে, ক্যাবল ও ব্যাগ এসেছিল দিনাজপুরে। তবে এগুলো শুধুমাত্র দিনাজপুরের জন্য নয়, বরং দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য এসেছিল। যেসব প্রতিষ্ঠানে এসব সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা আছে, সেগুলোতে দেওয়ার কথা ছিল। নিয়ম থাকলেও এসব প্রজেক্টর ও অন্যান্য সরঞ্জাম বুয়েটে পরীক্ষা করা হয়নি। পরীক্ষার আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি এসব সরঞ্জাম কোন কোন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হবে, তারও কোনও নির্দেশনা ছিল না। ফলে ভুলবশত বিতরণ করা হয়েছিল। দিনাজপুরসহ ১৯টি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এসব সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে অধিদপ্তর থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ী বিতরণ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, ‌যেসব বিদ্যালয়ে এসব সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে, তার সবগুলো ফেরত নিতে হবে। কারণ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এসে এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে। সেটি না করেই বিতরণ করা হয়েছিল। আমি এখানে যোগদানের আগেই এটি হয়েছে। ভুলবশত আগের শিক্ষা কর্মকর্তা বিতরণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, আমি এখানে যোগদান করার পর জানতে পারি টেকনিক্যাল কমিটির যাচাই-বাছাই ছাড়া এসব সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হবে এমন নির্দেশনা ছাড়াই বিতরণ করা হয়। পরে বিষয়টি আমরা অধিদপ্তরকে জানাই। অধিদপ্তর থেকে এসব সরঞ্জামের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে এগুলো এখন ফেরত নেওয়া হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলে অধিদপ্তর থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পরে বিতরণ করা হবে।

দিনাজপুর জেলায় এক হাজার ৮৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অনেক বিদ্যালয়ে প্রজেক্টর ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম আছে। যেগুলো এখন ফেরত আনা হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই গত আট মাসে ব্যবহার হয়নি। কারণ অনেকগুলো বিদ্যালয়ে আগে থেকেই প্রজেক্টর আছে, বলে জানান তিনি।

জনপ্রিয়