
সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সারাদেশে রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নিজেদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বার্তায় এ কথা জানান কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম ও জুবায়ের পাটোয়ারী। ফেসবুক পেজে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তারা জানান, ‘বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’
ভিডিও বার্তায় মাসফিক ইসলাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে এবং শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে বৈঠকে বসছেন তারা। এ সময় সারাদেশে রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে। বৈঠকে ছয় দফাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে। বৈঠক চলাকালীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।
ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশের তৃতীয় পক্ষ এবং বিভিন্ন কুচক্রী মহল আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত এবং ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আপনারা আজ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। যারা অনৈতিক কাজে আপনাদের লিপ্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। আমরা এই সরকারের বিপক্ষে নই, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করে আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করব।
ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয়ত, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
আর ষষ্ঠ দাবি হলো পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে, বুধবার সকাল ১০টার দিকে সারাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচি চলাকালীন কুমিল্লায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের লাঠিচার্জে ৩৫ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আন্দোলনের কারণে সারাদেশের মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও মধ্যরাতে ভিডিও বার্তায় সেটি বাতিল করা হয়।