
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গাছ কেটে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গল থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কেটে নির্মাণ করা হবে নতুন এ ভবন।
রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ইতোমধ্যে নির্ধারিত এলাকায় সুতা টাঙিয়ে লাল পতাকা ঝুলিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে সেগুন গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ রয়েছে।
এর আগে, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের পাশের জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্যোগ নেয় বিগত প্রশাসন। সে সময় শিক্ষার্থী এবং পরিবেশবিদদের বাধার মুখে বর্তমান প্রশাসন ওই স্থানটি থেকে সরে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৬টি ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হল নির্মাণ করা শেষ হয়েছে। এসব স্থাপনা করতে গিয়ে এক হাজারের বেশি গাছ কাটা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা বাধা দিলেও প্রশাসন কর্ণপাত না করে ভবন নির্মাণ চালিয়ে যায়। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসন এই প্রথমবারের মত গাছ কেটে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত প্রশাসন যখন যত্রতত্র গাছ কেটে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করতেন তখন বর্তমান প্রশাসনে যারা আছেন তারা বিরোধিতা করতেন। কিন্তু এই প্রশাসন দায়িত্বে এসে এমন উদ্যোগ নিয়েছে যা অপ্রত্যাশিত।
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সজিব আহমেদ জেনিচ বলেন, মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন না করে কোনো গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
তবে প্রশাসন বলছে, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গাটিতে ভবন করা হলে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির (টিএমসি) সদস্য সচিব ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন বলেন, টিএমসি কমিটি, বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যে জায়গাটি ছিল সেটা পরিবেশবিদদের আপত্তি ছিল তাই নতুন করে এই স্থানটি টিএমসি ঠিক করে দিয়েছে। স্থানটিতে ভবন নির্মাণের স্বার্থে ৪০টির মতো গাছ কাটা পড়বে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটার জন্য যথাযথ কমিটি টিএমসি রয়েছে। তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে জায়গাটি নির্ধারণ করেছে।