
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সরব হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, কুয়েটের ভিসির পদত্যাগ চাই। লজ্জায় পদত্যাগ করার মত ব্যক্তিত্ব না থাকলে বাধ্যতামূলক সরানো হোক।
সম্প্রতি কুয়েটে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সারজিস আলমের এই মন্তব্য বেশ সাড়া ফেলেছে অনলাইন দুনিয়ায়।
এদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একমত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে এনসিপি।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির পক্ষ থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিদাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিরসন করে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত। এতে বলা হয়, কুয়েটের উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে এনসিপি। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বহিরাগতরা দেশি অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা চালায়। হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ না করলেও একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজন দলীয় কর্মী থাকার কথা বলেছেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে এ ধরনের আচরণ বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে লক্ষ করা গেছে। এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা এবং উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপাচার্যকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদের অধিকার সবার রয়েছে, তবে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এনসিপির নেতারা আরও বলেন, দুই মাস আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা চরম দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। আগামীকাল (বুধবার) ইউজিসির একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে পরিদর্শনে কুয়েটে যাবে বলে জানা গেছে।