রুপালি পর্দার নবাবখ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর।
ঢাকাই সিনেমার নন্দিত অভিনেতা প্রবীর মিত্রের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে নেয়া হবে এফডিসিতে। সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বাদ জোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এফডিসি থেকে প্রবীর মিত্রের মরদেহ নেয়া হবে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা হবে। এরপর রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
এর আগে, বেশ কিছুদিন সিসিইউতে থাকলেও রোববার (৫ জানুয়ারি) তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
নামের কারণে প্রবীর মিত্র হিন্দু না মুসলাম এই প্রশ্ন আছে অনেকের মনে। বিষয়টি নিজেই খোলসা করেছিলেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা।
এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনও সে ধর্মেই আছি।’
কথোপকথনের একপর্যায়ে ধর্ম নিয়ে জানতে চাইলে প্রবীর মিত্র জানান, বিয়ের সময় মুসলমান হিসেবে কনভার্ট হয়েই বিয়ে করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই মাঝে খবর ছড়ায় প্রবীর মিত্র মুসলমান হয়েছেন। তবে ধর্ম নিয়ে প্রবীর মিত্রের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নাই। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই। মানুষ সবার উপরে।
এনটিভি অনলাইনকে প্রবীর মিত্রর একটি পারিবারিক সুত্র জানিয়েছে, বিয়ের সময় প্রবীর মিত্র নিজের নাম পরিবর্তন করে হাসান ইমাম রেখেছিলেন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রবীর মিত্র ‘লালকুটি’ থিয়েটার গ্রুপে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ শিরোনামে সিনেমার মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তাঁর অভিষেক হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে নায়ক চরিত্রে দেখা গেলেও বেশির ভাগ সিনেমায় চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখা মিলেছে তাঁর। অভিনয়ের বাইরে প্রবীর মিত্র ষাটের দশকে ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট খেলেছেন, ছিলেন অধিনায়ক। একই সময় তিনি ফার্স্ট ডিভিশন হকি খেলেছেন ফায়ার সার্ভিসের হয়ে। এ ছাড়া কামাল স্পোর্টিংয়ের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবলও খেলেছেন।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় অভিনয় শুরু করেন প্রবীর মিত্র। এইচ আকবর পরিচালত ‘জলছবি’ ছবিতে চিকিৎসকের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সূচনা হয় তাঁর। এরপর একই পরিচালকের ‘জীবন তৃষ্ণা’ ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে।
প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজন্তা মিত্র ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মারা গেছেন। প্রবীর মিত্রের এক মেয়ে ও তিন ছেলে।