আপনি কি সুখে থাকতে ভয় পান? বিজ্ঞানীরা এই রোগের নাম বলছেন চেরোফোবিয়া। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে ভয় পান যা তাদের সুঈ করতে পারে। এটি প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজকে নানাভাবে উপ্রভাবিত করতে পারে। কারণ যাদের চেরোফোবিয়া রয়েছে তারা সুখের ভয়ের কারণে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতায় জড়িত হতে চায় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত-
চেরোফোবিয়া কী?
চেরোফোবিয়া গ্রীক শব্দ ‘চেইরো’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘আনন্দ করা’। চেরোফোবিয়া আনন্দের প্রতি ভয় বা ঘৃণাকে বোঝায়। এটি একটি আকর্ষণীয় মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা যা সুখ বা আনন্দের তীব্র ভয় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা আনন্দদায়ক পরিস্থিততির মুখোমুখি হলে অস্বস্তি বা উদ্বেগ অনুভব করে।
ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রি অনুসারে, সুখের ভয় নিম্ন স্তরের বস্তুগত ভালো থাকা এবং উচ্চ স্তরের বিষণ্ণতার সঙ্গে যুক্ত। এটি নেতিবাচক আবেগের অনুভবও বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যারা দুঃখ এবং ক্রোধের মতো অনুভূতিগুলোকে ভয় পান এবং এড়িয়ে যান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই সুখকে ভয় পান।
চেরোফোবিয়ার কারণ
চেরোফোবিয়া বোঝার জন্য এর কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। যা নানা ধরনের হতে পারে। এতে মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কারণগু জড়িত থাকতে পারে।
১. অতীত ট্রমা
চেরোফোবিয়ার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে অতীত ট্রমা। যারা সুখের মুহুর্তে মানসিক যন্ত্রণা বা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, আনন্দ তাদের ক্ষেত্রে তৈরি করতে পারে। তারা মনে করে, সুখের পরেই দুঃখ চলে আসবে। যদি কারও জীবনে সুখের সময়কালের পরে ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি ঘটে থাকে, তবে তারা অবচেতনভাবে বিশ্বাস করতে পারে যে আনন্দ নেতিবাচক ঘটনার পূর্বসূরী।
২. মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা
আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো অন্তর্নিহিত মানসিক স্বাস্থ্য। যেমন বিষণ্ণতা বা উদ্বেগজনিত ব্যাধি। হতাশাগ্রস্থ লোকেরা মনে করতে পারে যে তারা সুখের যোগ্য নয় বা এটি বজায় রাখতে অক্ষম, যার ফলে তারা আনন্দদায়ক পরিস্থিতি এড়াতে পছন্দ করে। একইভাবে, উদ্বেগজনিত ব্যাধি ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ভয় এবং অনিশ্চয়তাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, আনন্দের সম্ভাবনাকে অপ্রতিরোধ্য বা বিপজ্জনক বলে মনে করে।
৩. সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব
সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবও চেরোফোবিয়ার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক নিয়ম এবং সাংস্কৃতিক বিশ্বাস সুখের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করতে পারে। কিছু সংস্কৃতিতে একটি প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে সুখ প্রকাশ করা বা চাওয়া স্বার্থপরতা বা অনুপযুক্ত। এর ফলেও তারা সুখ বা আনন্দকে এড়িয়ে চলতে পারে।
৪. পারিবারিক প্রভাব
পারিবারিক পরিবেশ এবং লালন-পালনের ধরনও চেরোফোবিয়ার বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। শিশু যদি এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠে যেখানে আবেগের প্রকাশকে নিরুৎসাহিত করা হয়, তাহলে বড় হয়ে তাদের ক্ষেত্রেই এই ভয় কাজ করতে পারে।
৫. ব্যক্তিগত বিশ্বাস
চেরোফোবিয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং নেতিবাচক চিন্তার ভূমিকা বিবেচনা করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। চেরোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুখ সম্পর্কে অযৌক্তিক বিশ্বাস রাখতে পারে। যেমন, ধারণা করা যে এটি ক্ষণস্থায়ী বা নেতিবাচক পরিণতির কারণ হতে পারে।