সকালে নারিকেল খাওয়ার অভ্যাস এক কাপ কফি বা টোস্টের মতো পরিচিত নাও হতে পারে, তবে যারা স্বাস্থ্যকর উপায়ে দিন শুরু করতে চান তাদের জন্য এটি বিবেচনা করার মতো একটি অভ্যাস। নারিকেল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে যা এটিকে আপনার সকালের রুটিনে একটি চমৎকার সংযোজন করে তোলে। কেন খালি পেটে নারিকেল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী হতে পারে, চলুন জেনে নেওয়া যাক-
১. প্রাকৃতিক শক্তি বুস্টার
নারিকেল মিডিয়াম-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড (MCTs) সমৃদ্ধ। এটি এক ধরনের চর্বি যা দ্রুত শোষিত হয় এবং শরীর দ্বারা শক্তির দ্রুত উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লং-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডের বিপরীতে এটি হজম প্রক্রিয়াকে বাইপাস করে, যা আমাদের শরীরের জন্য একটি আদর্শ শক্তির উৎস।
জার্নাল অফ লিপিড রিসার্চ-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, নারিকেল থেকে পাওয়া MCT বিপাকীয় হার এবং শক্তি ব্যয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে।
২. হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
নারিকেল দিয়ে দিন শুরু করলে তা হজমে সাহায্য করতে পারে। নারিকেলে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ফাইবার রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের গতিবিধিকে উৎসাহিত করে এবং উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে এবং স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং হেপাটোলজি জার্নালে প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, নারিকেলের ফাইবার হজমের সময় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, এটি পেট ফুলে যাওয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যার জন্য একটি ভালো প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে করে। যারা প্রায়ই সকালে হজমের অস্বস্তি অনুভব করেন, তারা সকালে নারিকেল চিবিয়ে খেতে পারেন।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা নারিকেলে লরিক অ্যাসিড রয়েছে। এটি একটি যৌগ যা এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। লরিক অ্যাসিড শরীরে মনোলোরিনে রূপান্তরিত হয়। এটি এমন একটি পদার্থ যা ক্ষতিকারক প্যাথোজেন, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটি দুর্দান্ত ইমিউন সিস্টেম বুস্টার, বিশেষ করে যখন খালি পেটে খাওয়া হয়।
মেডিসিনাল ফুড জার্নালের গবেষণা নিশ্চিত করে যে নারিকেল থেকে পাওয়া লরিক অ্যাসিড শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব প্রদর্শন করে, বিশেষ করে স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস এবং ই. কোলাই-এর মতো ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেনের বিরুদ্ধে। তাই আপনার সকালের রুটিনে নারিকেল রাখলে তা সাধারণ সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা প্রদান করতে পারে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত উপাদানের কারণে নারিকেল খেলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। নারিকেলের এমসিটি পেটে পূর্ণতার অনুভূতি বাড়াতে পারে, যা আপনাকে অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে সাহায্য করে। এটি খাদ্যে প্রচুর ফাইবার যোগ করে, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরিয়ে রাখে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ওবেসিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারিকেলে খাওয়ার ফলে শরীরের চর্বি কমতে পারে এবং চর্বি অক্সিডেশন বাড়তে পারে। যেসব অংশগ্রহণকারীরা নারিকেলের মতো এমসিটি-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেছেন তাদের শরীরের ওজন এবং ফ্যাটি শতাংশ কম ছিল যারা লং-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করেন তাদের তুলনায়।
৫. স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং চুল
নারিকেল একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী খাবার। এর স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনের সমৃদ্ধ সরবরাহ উজ্জ্বল ত্বক এবং শক্তিশালী চুলকে উন্নীত করতে সাহায্য করে। নারিকেলের চর্বি ত্বক এবং চুলের আর্দ্রতার মাত্রা বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ত্বকের হাইড্রেশন এবং স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে নারিকেল থেকে প্রাপ্ত তেলের কার্যকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। নারিকেলের নিয়মিত সেবন তারুণ্য, কোমল ত্বক বজায় রাখতে এবং অভ্যন্তরীণ পুষ্টি প্রদান করতে পারে যা বাহ্যিকভাবে প্রতিফলিত হয়।
৬. রক্তে শর্করার মাত্রা ভারসাম্য রাখে
সকালে নারিকেল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, এর কম গ্লাইসেমিক সূচক এবং ফাইবার সামগ্রী এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ফাইবার কার্বোহাইড্রেটের হজমকে ধীর করে দেয়, যা রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি এবং ক্র্যাশ প্রতিরোধ করতে পারে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা।
ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিক ডায়েটে নারিকেল অন্তর্ভুক্ত করলে তা গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। নারিকেল দিয়ে দিন শুরু করলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে পারে।