ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১২ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

স্তন ক্যানসার নিরাময়ে চাই সচেতনতা

লাইফস্টাইল

আমাদের বার্তা ডেস্ক 

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১২:৪৫, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

সর্বশেষ

স্তন ক্যানসার নিরাময়ে চাই সচেতনতা

দিনদিন অসংক্রামক ব্যাধির সংখ্যা বেড়েই চলছে। তার মধ্যে অন্যতম ক্যানসার শব্দটি। শুনলেই সবাই আঁতকে ওঠেন। একসময় মনে করা হতো, ক্যানসারের কোনো অ্যানসার (উত্তর) নেই। একবার ক্যানসার হওয়া মানেই ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু। কিন্তু এখন এই ধারণা একেবারেই অমূলক। অধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন আর ক্যানসার মানে অবধারিত মৃত্যু নয়। ক্যানসারের চিকিৎসাও আর অজেয় নয়। শুরুতেই দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে এ রোগের চিকিৎসা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভও সম্ভব। 

সমস্যা দেখা দেয় অধিকাংশ আক্রান্ত নারীরা যথাযথ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। তাছাড়া সামাজিক বিধিনিষেধ, লোকলজ্জা এবং সচেতনতার অভাব সব মিলিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যেতে অনেক দেরি করে। এ অবস্থায় চিকিৎসার খরচ যেমন বেড়ে যায়, রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়।

নারীদের সবচেয়ে বেশি হওয়া ক্যানসারগুলোর একটি ব্রেস্ট ক্যানসার বা স্তন ক্যানসার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে স্তন ক্যানসারে মারা গেছেন ৬ লাখ ৭০ হাজার নারী। স্তন ক্যানসার আসলে নারীদের রোগ, তবে অনেক সময় পুরুষদেরও জন্য ক্যানসার হতে পারে, একটা রোগ হয় তাকে বলে ক্লাইনে ফেল্টার্স সিনড্রোম। ০.৫ থেকে ১ শতাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে স্তন ক্যানসার একটি মারাত্মক ব্যাধি।

সারা বিশ্বের মাতা বাংলাদেশের নারীদের মধ্যেও এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঝুঁকি অনেক বেশি। প্রতি বছর বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন ১৩-১৪ হাজার নারী এবং মারা যান প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার নারী।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ ক্যানসার আক্রন্ত শতভাগ রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব। জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে প্রতি বছর অক্টোবর জুড়ে বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ১০ অক্টোবর বিশ্ব স্তন ক্যানসার দিবস বিশেষভাবে পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো 'স্ক্রিনিং জীবন বাঁচায়'। জনগণের মধ্যে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও সময়য়মতো চিকিৎসা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করন এসব কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।

স্তন ক্যানসারের কারণ নির্দিষ্টভাবে কেনো কারণ জানা না থাকলেও কিছু কিছু ফ্যাক্টর ক্যানসারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়, যেমন
(১) ব্যাস: ব্যাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে ৫৫ বছরের বেশি বয়স হলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 
(২) লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর: প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান, দীর্ঘদিন মদ্যপানের অভ্যাস এবং ব্যায়াম বা হাঁটাচলা একেবারেই না করা, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন বা স্থূলতা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত।
(৩) স্তন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস অন্যতম কারণ।
(৪) হরমোনাল ফ্যাক্টর: হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, কম বয়সে মাসিক চক্র অরম্ভ বা তাড়াতাড়ি ঋতুস্রাব এবং দেরিতে মেনোপজ স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি
বাড়ায়। 
(৫) জীবনে বাচ্চা না নেওয়া বা কখনো গর্ভবতী হয় নাই বা অধিক বয়সে শিশু জন্ম দেওয়া যেমন ৩০ বছর বয়সের পরে যাদের প্রথম সন্তান হয়েছে, বা যারা বুকের দুধ পান করাননি তাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। 

বিপরীতভাবে একাধিক গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় লক্ষণ: স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে ঐ অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়য়, আর তাই রূপ নেয় ক্যানসারে। নিম্নে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো যেগুলো দেখা দিলে ক্যানসারের ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। 
(১) স্তনে চাকা বা পিও, স্তনের ভিতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া এবং স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
(২) নিপল বা বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, অসমান বা বাঁকা হওয়া অথবা উলাটানো স্তনবৃন্ত, যা আগে উলটানো ছিল না।
(৩) স্তনবৃন্তের চারপাশে বা স্তনের কোথাও গাঢ় পিগমেন্টেশন বা ফ্লেকিং এবং ত্বকের খোসা দেখা দিলে।
(৪) নিপল বা স্তনবৃন্ত দিয়ে অস্বাভাবিক রস বা রক্তক্ষরণ হওয়া
(৫) স্তনের চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন এবং ডিম্পলিং, বিভিন্ন দিকে বেঁকে যাওয়া। 
(৬) ডান বা বাঁ স্তনের পাশের বগলতলায় পিও বা চাকা দেখা দিলে। 

পরীক্ষা: দুটি উপায়ে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যায়। কোনো লক্ষণ টের পেলে জরুরিভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো উচিত। আবার যাদের মধ্যে লক্ষণ নেই, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে রোগী শনাক্ত করা উচিত। ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এগজামিনেশন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে স্তন পরীক্ষা করাকে ক্লিনিক্যাল এগজামিনেশন বলে। চিকিৎসক স্তন ও বগলতলায় কোনো চাকা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন আছে কি না তা সুনির্দিষ্ট নিয়মে সযত্নে পরীক্ষা করে দেখেন।

চিকিৎসা: স্তন ক্যানসারের স্টেজ ও ধরনের ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোনথেরাপিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি স্তন ক্যানসার নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার কোষ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না হলে তা আবার ফিরে আসতে পারে। তাই নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন আর ক্যানসার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। একটু সচেতন হলেই ক্যানসারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্তন ক্যানসারেরলক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি চিকিৎসা করানো যায় তাহলে এই রোগ থেকে শতভাগ মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি ক্যানসার হয়েও যায় তবুও শুরুতেই। দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে তার ভালো চিকিৎসা করা যায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভও সম্ভব। 

তাই স্তন ক্যানসার নামক এই বিভীষিকার হাত থেকে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের দরকার যথাযথ শিক্ষা ও সচেতনতা।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সিনিয়র চিকিৎসক

জনপ্রিয়