মাথাব্যথা খুবই খারাপ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। যা আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে থাকে। নিয়মিত মাথাব্যথা অবশ্য ছোট থেকে বড় ধরনের অনেক ভয়াবহ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিয়ে থাকে। এ জন্য মাথাব্যথাকে কখনোই স্বাভাবিকভাবে না নেয়ার কথা বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে অনেক সময় দেখা যায় শুধু আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে গরম থেকে মাথাব্যথা হয়। যদিও হালকা গরম শরীর ও মনের জন্য ভালো। কিন্তু সেই গরম তীব্র হলে তা থেকে প্রচণ্ড মাথাব্যথার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। কেন এ ধরনের মাথাব্যথা হয় এবং করণীয় কী, এ সম্পর্কে ইন্ডিয়ান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন দিল্লির সিকে বিড়লা হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন ডিরেক্টর ডা. রাজীব গুপ্ত।
এ চিকিৎসক জানিয়েছেন, সাধারণত গরমে পানিশূন্যতা এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এর যেকোনো একটি বা উভয় কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। গরম থেকে ঘাম হলে শরীর তরল হারায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতাসহ বিভিন্ন কাজের গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইটের সূক্ষ্ম ভারসাম্য ব্যাহত করে। এ থেকে আপনার মাথাব্যথা তীব্রতর হতে পারে।
সূর্যের তাপ বা গরম শুধু হাইড্রেশনেই প্রভাবিত করে না, রক্তনালীকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাপ মস্তিস্কে রক্তনালীগুলোর প্রসারণ ঘটাতে পারে। যা থেকে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। মনে করুন মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো পাইপ, আর সেই পাইপ যদি তাপ পায় তাহলে প্রসারিত হবে। এ অবস্থায় মাথাব্যথা হতেই পারে।
অতিরিক্ত ঘাম ও ক্রমশ তাপমাত্রা শরীরে চাপেরও সৃষ্টি করে। এই চাপ টেনশনের মাথাব্যথা সৃষ্টি করে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ব্যক্তিদের মধ্যে মাইগ্রেন হিসেবে প্রকাশ পায়। এ জন্য রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে অল্পতেই মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
ডা. রাজীব গুপ্তের মতে, সূর্যের তাপ বা গরম থেকে নিয়মিত মাথাব্যথায় ভোগা উদ্বেগের কারণ। এ গরম থেকে দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন, ক্রমশ চাপ, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা এবং মস্তিষ্কে ভাস্কুলার পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে। তাই মাথাব্যথা হলে সমস্যা নির্ণয় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন।
হাইড্রেশনই সব: নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য দিনভর প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানিই হচ্ছে সেরা বন্ধু। এ সময় ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়তেও ভরসা রাখতে পারেন।
ছায়া ও শীতল পরিবেশে থাকা: সরাসরি সূর্যের তাপ যেন গায়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এ জন্য ছায়াযুক্ত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন এবং শীতল জায়গায় থাকুন। সম্ভব হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে বিরতি নিতে পারেন। আবার শরীর ঠান্ডা করার জন্য ফ্যানও ব্যবহার করতে পারেন। এতেও আপনার শরীর ঠান্ডা থাকবে।
ঘুম ও বিশ্রাম: সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। এ জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। বিশ্রামে থাকলে শরীর গরম বা তাপ থেকে ভালো তাকে।
ডিহাইড্রেটিং ড্রিংকস নয়: অ্যালকোহল ও ক্যাফিন এড়িয়ে চলার অভ্যাস করুন। এসব উপাদান ডিহাইড্রেশনে কাজ করে। যা থেকে মাথাব্যথা বা আগে থেকে মাথাব্যথা থাকলে তা তীব্র হতে পারে।
চশমা ব্যবহার: বাইরে বের হলে সূর্যের তাপ চোখে পড়লে তা থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। এ জন্য সানগ্লাস ব্যবহারের চেষ্টা করুন। আর যেকোনো ক্ষেত্রে মাথাব্যথা তীব্রতর মনে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে।