বাঙালির ঘরে ঘরে হজমের সমস্যা। ওষুধের বাক্সে খানকতক অ্যান্টাসিড থাকবেই থাকবে। ডুবো তেলে ভাজা চপ বা কষিয়ে রাঁধা মাছ অথবা মাংস খেয়েই মুখে অ্যান্টাসিড পুরে দেয়ার অভ্যাস কমবেশি সকলেরই আছে। স্যুপ-স্যালাডে ঠিক রসনা তৃপ্তি হয় না।
দুপুরের খাবার হোক বা নৈশভোজ— ঝালেঝোলে অম্বলে দু’চারটি পদ পদ থাকবেই। আর দিনের পর দিন এমন খাবার খেয়ে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা, হজমের গোলমালও বাঁধবে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানালেন, ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাস তো আছেই, তা ছাড়া রোজের জীবনে এমন কিছু বদভ্যাস অনেকেরই আছে যা পেটের সমস্যা আরো বাড়িয়ে তুলছে। সবসময়ে যে কড়া ডায়েট করতেই হবে তা নয়, বরং কিছু অভ্যাস বদলালেই পেটের গন্ডগোল থেকে চিরতরে রেহাই পাওয়া যাবে।
বেশি রাতে ভাজাভুজি
পুষ্টিবিদের কথায়, ১০টা বা ১১টার পরে রাতের খাবার খাওয়ার পরে শুতে গেলে হজমের গন্ডগোল তো শুরু হবেই, অনিদ্রাজনিত সমস্যাও দেখা দেবে। বেশি রাতে লুচি-পরোটা খেয়ে ফেললেন অথবা বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খেলেন, তাতে পেটের সমস্যা আরো বাড়বে। রাতের দিকে পরিপাক ক্রিয়ার হার কমে যায়। পাকস্থলী ওই সময়ে বেশি তেল বা মশলা পরিপাক করতে পারে না। ফলে তা টক্সিন হয়ে জমতে শুরু করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে রাতের খাওয়া সারতে হবে এবং রাতে খুব হালকা কিছুই খেতে হবে।
দুটি মিলের মধ্যে ব্যবধান
যে কোনো খাবার পুরোপুরি হজম করতে মানুষের শরীর কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় নেয়। অর্থাৎ যে কোনো দুটি খাবারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ৪ ঘণ্টার বেশি হতে হবে। এর চেয়ে কম ব্যবধানে খেলে অতিরিক্ত খাবারের দরুণ বদহজম এবং এর চেয়ে বেশি ব্যবধানে খেলে অম্বল হবেই। পেট ফাঁপার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
তাড়াহুড়োয় প্রাতরাশ বাদ
প্রাতরাশে সাধারণত দুধ, ফল, দানাশস্য জাতীয় খাবার তো থাকেই। তাই এগুলি বাদ দিলে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন সি, ফাইবার, অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি বাদ পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। যাঁরা প্রাতরাশ খান না, তাদের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার কম থাকে। সুতরাং শরীরে পুষ্টিগুণও কম পরিমাণে পৌঁছয়। এঁরা খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট, সুগার ও ফ্যাট বেশি পরিমাণে রাখেন এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান, ফলে পেটের গোলমাল লেগেই থাকে।
ফাইবার না খেলেই মুশকিল
আপনি হয়তো ভাবছেন যে কম কার্বোহাইড্রেট ও বেশি প্রোটিন গ্রহণ করার ফলে আপনার ওজন কমবে এবং আপনি ফিট থাকবেন।তা কিন্তু নয়। পুষ্টিবিদের বক্তব্য, ফাইবার কম খেলেই ওজন বাড়বে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো কমবেই, অন্ত্রে উপকারি ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যাও কমবে। ফলে হজমের সমস্যা দেখা দেবে, কোষ্ঠকাঠিন্য ভোগাবে এবং সবসময়েই ক্লান্ত, অবসন্ন লাগবে।
খাওয়া সেরেই ঘুম
দুপুরে হোক বা রাতে, খাওয়া সেরেই ঘুমিয়ে পড়লে বদহজম তো হবেই। খাওয়া ও ঘুমানোর মধ্যে অন্তত ৩ ঘণ্টার ব্যবধান থাকা উচিত। খেয়েই শুয়ে পড়লে বদহজম, বুকজ্বালা, অম্বল, ওজন বৃদ্ধি এমনকি স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি করুন। দুপুরের খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে প্রাণায়াম বা হালকা যোগাসনও করে নিলে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরে যাবে।