কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস আজ মঙ্গলবার। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এইদিনে বাংলার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে কুড়িগ্রামকে স্বাধীন করে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ৬ ডিসেম্বর না হলেও সেদিনই বাংলার দামাল ছেলেরা কুড়িগ্রামকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ খচিত পতাকা উত্তোলন করে ইতিহাস সৃষ্টি করে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারেও স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, বিজয়স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গোটা কুড়িগ্রাম জেলা ছিলো ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন। একমাত্র রৌমারী উপজেলা ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেখানে পৌঁছাতে পারেনি ফলে ঐ থানার অধীন রৌমারী অঞ্চল মুক্তাঞ্চল হিসাবে থেকে যায়। পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য সেখানেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়।
এ ছাড়া অনেকেই সীমান্ত লাগোয়া ভারতের মাইনকার চরে প্রশিক্ষণ নিয়ে রৌমারীতে আসেন। কুড়িগ্রাম অঞ্চলে নভেম্বরের প্রথম থেকেই ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি আক্রমণ তীব্র হয়। একে একে পতন ঘটতে থাকে পাকিস্তানী সেনাদের শক্ত ঘাঁটিগুলো।
মিত্রবাহিনীর অভিযানের ফলে নভেম্বরেই হানাদার মুক্ত হয় জেলার ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, চিলমারী, উলিপুরসহ জেলার অধিকাংশ এলাকা। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানি সেনারা তাদের ঘাঁটি গুটিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একের পর এক বিমান হামলায় বেসামাল হয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেনারা। মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
৫ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর ভোররাত পর্যন্ত সব হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রাম থেকে ট্রেনযোগে পালিয়ে তিস্তা ও কাউনিয়া হয়ে রংপুর অভিমুখে যায়। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ৬ ডিসেম্বর ভোর। কুড়িগ্রাম হয় হানাদার মুক্ত। ওই দিন ৬নং সাব সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার মো. আবদুল হাই সরকার বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বিকেল ৪টার দিকে একটি অগ্রগামী দল কুড়িগ্রাম শহরে প্রথম প্রবেশ করে।