একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের এই দিনে সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি মানচিত্রখচিত পতাকাটি প্রথম উত্তোলন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণের বটতলায় পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব। সেদিন দুপুরে ও রাতে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়েছিলো। সেই দিনের স্মরণে আজ ঐতিহাসিক জাতীয় পতাকা দিবস। পরের দিন ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ।
২ মার্চ প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হলেও বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ।
মার্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলেও পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল আরো কয়েক মাস আগে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুন ইকবাল হলের (বর্তমানের সার্জেন্ট জহুরুল হক) ১১৬ নম্বর কক্ষে পতাকার আকার, গঠনসহ পতাকার বিষয়ের পরিকল্পনার জন্য বৈঠক করেছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। সভায় কাজী আরেফ আহমেদের প্রাথমিক প্রস্তাবনার ওপর আলোচনা শেষে পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। পতাকার ডিজাইন ঠিক করা হয়েছিলো সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্য, তার মধ্যে হলুদে খচিত বাংলাদেশের মানচিত্র। ঐ রাতেই নিউমার্কেট থেকে সবুজ কাপড় কিনে তার মধ্যে লাল বৃত্ত সেলাই করে নেয়া হয়েছিলো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কায়েদ আজম হলে (বর্তমান তিতুমীর হল)।
পরবর্তীতে কায়েদ আজম হল থেকে পতাকা নেয়া হয় শেরে বাংলা হলে। রাত ১১টা নাগাদ হয়েছিলো পতাকার সম্পূর্ণ ডিজাইন সম্পন্ন হয় কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবনারায়ণ দাসের হাতে। নিউমার্কেটের ছাত্রলীগ অফিসের কাছেই নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সে বানানো হয়েছিলো নতুন পতাকা। ৭ জুন বঙ্গবন্ধুর হাতে সেই পতাকা তুলে দিয়েছিলেন আ স ম আব্দুর রব। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে সেই পতাকা ছাত্র-জনতার সামনে তুলে ধরেছিলেন। এ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তির বীজ বপন হয়েছিলো।