ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩ আশ্বিন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

প্রসিকিউটরহীন ঢাকার বিচারিক আদালত, নিরপেক্ষ প্রার্থী খুঁজছে সরকার

জাতীয়

আদালত প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

প্রসিকিউটরহীন ঢাকার বিচারিক আদালত, নিরপেক্ষ প্রার্থী খুঁজছে সরকার

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পরই আত্মগোপনে চলে যান দেশের সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৬ আগস্ট থেকে ঢাকার নিম্ন আদালত ঢাকা মহানগর দায়রা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবুও আত্মগোপনে চলে যান।

গত ৬ আগস্ট বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এজলাসে ঢুকে পিপি, স্পেশাল পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপি বসার চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করেন। নিরাপত্তার অভাবে ঢাকার আদালতের সাত শতাধিক স্পেশাল পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপি আদালতে আসা বন্ধ করে দেন। দিন দশেক পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলে বিচ্ছিন্নভাবে স্পেশাল পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপিদের কেউ-কেউ আদালতে এসে নিজের মামলা দেখাশুনা শুরু করেন। কিন্তু আর আদালতে যাননি। ফলে গত দেড় মাস যাবৎ পিপি, স্পেশাল পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপি ছাড়াই চলছে ঢাকার আদালত।

রাষ্ট্র বাদী মামলার বিচারে রাষ্ট্রের হয়ে দায়িত্ব পালন করেন পিপিরা। আসামিপক্ষে দায়িত্ব পালন করেন তাদের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত সাধারণ আইনজীবীরা। দীর্ঘদিন আদালতগুলোতে পিপি না থাকায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে উপস্থিত থাকলেও রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। ফলে ক্রিমিনাল কেসগুলো তথা ফৌজদারী মামলায় নেমে এসেছে স্থবিরতা।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতসহ ঢাকার নিম্ন আদালতে শতাধিক ফৌজদারি আদালত রয়েছে। যেখানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক দফায় প্রায় সাত শতাধিক পাবলিক প্রসিকিউট নিয়োগ দেয়। যাদের মধ্যে একজন ঢাকা জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং একজন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর। তাদের অধীনে অর্ধশতাধিক অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ও ছয় শতাধিক সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়।

তারা ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতগুলো ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতগুলো ও যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতগুলো, ৪টি দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল, ৯টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ১০টি বিশেষ জজ আদালত, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, জননিরাপত্তা অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, পরিবেশ আদালত, পরিবেশ আপিল আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট (সিএমএম) আদালত ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট (সিজেএম) আদালত ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতগুলোতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। 

প্রসিকিউটরা সাধারণত রাষ্ট্রের স্বার্থ আছে এমন মামলায় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের দায়িত্বে মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীকে প্রস্তুত করা, আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষীকে জেরা করা, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী বৈরী ঘোষণা করে তাকে জেরা করা, সাক্ষী না আসলে আদালতে সময় নেয়া, জামিন আবেদনের বিরোধিতা করা, চার্জগঠনের বিষয়ে আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ উপস্থাপন করা এবং রাষ্ট্রপক্ষে আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা প্রভৃতি। আদালতে পিপিরা না থাকায় মামলা বিলম্বিত হচ্ছে।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের আগেই ৮ আগস্ট দুপুরেই রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেন। এরপর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ৬৬ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ১৬১ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেয়া হলেও প্রথম থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগে সিদ্ধান্তহীনতা ভোগে।

২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকার পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী। ২৮ আগস্ট বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ করলে ২৯ আগস্ট তিনি পিপি পদে যোগদান করতে অপারগতা প্রকাশ করে সলিসিটর অফিসে চিঠি দেন। তার প্রেক্ষিতে ওইদিনই তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপর ২০ দিন গত হলেও এখনো কাউকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

জানা যায়, এহসানুল হক সমাজী পিপি পদে যোগদানে অপারগতা প্রকাশ করার পর ওই পদে সিনিয়র ফৌজদারি আইনজীবী আমিনুল গণী টিটোকে প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে বিএনপি দলীয় ৩ জন আইনজীবী মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ লাভের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী এবং বিএনপির সহ-আইন সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদন মেজবাহ।

প্রার্থীদের মধ্যে ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে সরকার পক্ষে সরব থাকলেও অন্যদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। এদিকে বিএনপির হয়ে যেই পিপি পদে নিয়োগ পান না কেনো স্পেশাল পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপি পদের তালিকা তৈরি করে রেখেছে দলটি। ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ হওয়ার পরই এই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ তালিকায় ঠাঁই পেতে অনেক নতুন মুখকে আদালতে সোচ্চার হতে দেখা গেছে।

ঢাকা বারের এক আইনজীবী দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলবাজ কোনো আইনজীবীকেই ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দিতে চাচ্ছে না। এজন্যই অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ সিনিয়র আইনজীবী খুঁজছে। তাই পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ বিলম্বিত হচ্ছে।  

জনপ্রিয়