সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জে করা রিট আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে; পরের শুনানি হবে আগামী বুধবার।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আংশিক শুনানি নিয়ে পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভুঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
শুনানি শুরু করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন অ্যাডভোকেট শরীফ ভুঁইয়া। পরে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক আগামী বুধবার বাকি শুনানির দিন রাখেন।
বিচারক বলেন, “আজ হিয়ারিং ওপেন করলাম। পার্ট হার্ড (আংশিক শুনানি) থাকল। আগামী বুধবার (৬ নভেম্বর) আবার শুনব। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুনব। বুধবার ও বৃহস্পতিবার।”
এর আগে গত ২২ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ওই রুল জারি করেন। পরে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) এ রুলে পক্ষভুক্ত হন বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এ আদেশের পরে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এরফলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে ইন্টারভেনর হতে আবেদন করে বিএনপি। দলটির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাইকোর্টে এ আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন সব বিরোধী দলের দাবি মেনে নিয়ে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায়, তখন এটা সংসদে পাস করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর জনগণের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার যে সরকার ব্যবস্থা চালুর জন্য রাজপথে ছিল, তারাই ক্ষমতায় এসে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। তবে এ সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফেরাতে বিএনপি প্রায় দেড় দশক ধরে রাজপথে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এ মামলায় বিএনপি ইন্টারভেনর হয়ে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ চায়।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি পিছিয়ে ওই দিন ধার্য ছিল।
এর আগে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে আলাদা আলাদা রিট করেন।
পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে নতুন রুল-
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সংবিধানের ওই সংশোধনী আনা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের অন্তত ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আবেদনকারী হয়ে গত সপ্তাহে একটি রিট করেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আদালত রুল দেন। রুলে ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও এ এস এম শাহরিয়ার কবির। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে অংশ নেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।