জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সর্বশেষ আত্মাহুতি দানকারী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শহীদ আবদুল্লাহর কবর জিয়ারত করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
উপদেষ্টা সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলের বড়আঁচড়া গ্রামে আবদুল্লার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং শহীদের আত্মার প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে যশোরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাজী নাজিব হাসান, এসিল্যান্ড নুসরাত ইয়াসিন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত, শার্শা উপজেলা ছাত্রদল নেতা সামসুজ্জোহা সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে কবর প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে আবদুল্লাহ আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক সমাজের পিপাসায় আবদুল্লাহর আত্মত্যাগ সোনার হরফে লেখা থাকবে। শত শহীদের স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়েই এক আবদুল্লাহ লক্ষ আবদুল্লাহ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবে।
আব্দুল্লাহর পরিবারের জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার তা করবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
উপদেষ্টা সেখানে পৌঁছানোর পর আব্দুল্লাহর মা মাবিয়া খাতুন, বাবা আব্দুল জব্বার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা সন্তান হত্যা বিচার চান।
মাবিয়া খাতুন বলেন, পুলিশ আমার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। যারা গুলি করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। তবেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এমন অবস্থায় প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন। প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলি বের করা হয়। তবে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকলেও তাকে হাসপাতাল থেকে ১০ আগস্ট জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এরপর তাকে বেনাপোলে নিয়ে আসেন স্বজনরা। বাড়িতে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ১১ আগস্ট রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ডাক্তাররা দ্রুত আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
গত ১২ আগস্ট সকাল ৭টায় তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। আবারও তার অপারেশন করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান।