যশোরে সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের প্রতিষ্ঠানের দখল থেকে প্রায় ৪২ একর বা ১২৭ বিঘা জমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন। যশোর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেখ আফিল উদ্দিনের জমি দখলসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, শার্শা উপজেলার হরিণাপোতা মৌজার মোট ৪১.৯৬ একর জমি শেখ আফিল উদ্দিনের প্রতিষ্ঠান ‘আফিল ব্রিডার ফার্ম লিমিটেড’ দখল করে মাছ চাষ করছে।
জলাভূমির ওই জায়গা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক যশোরের নামে এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত।
তথ্য-প্রমাণ নিশ্চিত হয়ে বুধবার(২০ নভেম্বর) শার্শা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উল্লিখিত জমি বাঁশের খুঁটি ও লাল পতাকা দিয়ে দখলে নিয়ে যশোর জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন পাঠান।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ আফিল উদ্দিন যশোর-১ (শার্শা) আসনে বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অন্য এমপিদের মতো তিনিও পলাতক।
শেখ আফিল উদ্দিনের ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম ‘আফিল গ্রুপ’। এই গ্রুপের অধীনে মাছ, মুরগি, ডিমসহ নানা কৃষিপণ্য ও অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে। আফিল উদ্দিন শ্রেষ্ঠ খামারি হিসেবে আওয়ামী লীগ আমলে বেশ কয়েকবার ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক’ পেয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, আফিল উদ্দিন শার্শা এলাকার বহু জমি বলপূর্বক দখলে নিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এখন তাদের জমি ফেরত পাওয়ার আশায় প্রশাসনের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এ ছাড়া আফিলের সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে শার্শা-বেনাপোল অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে চোরাচালান ঘাট নিয়ন্ত্রণ, বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং কাজ কবজা করা ছাড়াও বহু খুন-খারাবির অভিযোগ রয়েছে।
বুধবার প্রায় ৪২ একর সরকারি জলাভূমি উদ্ধারের পর যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ওই জলাভূমিতে মাছ চাষ করা হতো। এখন ভূমি উদ্ধারের পর বিধি অনুযায়ী দু-এক দিনের মধ্যে মাছ উন্মুক্ত নিলামে তোলা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, শুধু ওই জমিই নয়, শার্শা বা যশোরের অন্য কোনো এলাকায় সরকারি ভূমি কেউ জবরদখল করে রাখলে তা উদ্ধার করা হবে।
এদিকে, সরকারি জমি দখলে রাখার ব্যাপারে যোগাযোগ করেও সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের বক্তব্য জানা যায়নি। যোগাযোগ করা হলে আফিল গ্রুপের অন্যতম পরিচালক মাহবুব আলম লাভলু কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে অপারগতা জানান। তিনি আফিল গ্রুপের এস্টেট অফিসার মো. আবু কালামের ফোন নম্বর দেবেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে লাভলু পরে আর এস্টেট অফিসারের ফোন নম্বর দেননি।
এদিকে, সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত হওয়ায় খুশি স্থানীয় লোকজন। তাদের আশা, দখলমুক্ত জমিতে তারা মাছ চাষ ও কৃষিকাজ করার সুযোগ পাবেন।
শার্শা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাসান জহির বলেন, বিনা ভোটের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষ ছাড়াও সরকারি জমি দখলে নিয়ে ভোগ করে আসছিলেন ১৬ বছর ধরে। অনেক গরিব মানুষের জমি ভয়ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে দখলে নিয়েছেন এমপি। শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ড. নাজিব হাসান বলেন, উপজেলাব্যাপী সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে।