ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

যমুনা সেতুর টোল আদায়: পাঁচ বছরে ক্ষতি ২০ কোটি টাকা

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:০০, ২২ নভেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

যমুনা সেতুর টোল আদায়: পাঁচ বছরে ক্ষতি ২০ কোটি টাকা

বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর টোল আদায়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে একটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের ক্ষতি ২০ কোটি টাকার বেশি। দেশি কোম্পানিটি প্রস্তাব দেয় ৫৫ কোটি টাকার অথচ ৬০ কোটি টাকায় কাজ পায় চীনা প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধান বলছে, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সব আয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ায় তড়িঘড়ি করে চীনা কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে সেতু বিভাগ।

জানা গেছে, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে যমুনা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে টোল আদায় করেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। এদের সাথে চুক্তি হয় পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে চুক্তি শেষ হলে বাধে বিপত্তি। ঠিকাদার নিয়োগ সময় সাপেক্ষ, তাই কারিগরি সহায়তার জন্য আনিসুল হকের প্রতিষ্ঠান সিএনএসকে ছয় মাসের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে সেই প্রতিষ্ঠানই যাতে কাজ পায় এমন শর্ত আরোপ করা হয়। তারপরও কাজটি পাবে না বুঝতে পেরে, হাইকোর্টে রিট করেন সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানটি। মামলা চলার সময়েও টোল আদায় করতে থাকে সিএনএস। আট বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। 

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে রিট নিষ্পত্তি হলে আবারও দরপত্র আহ্বান করে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৫০টি কোম্পানি টেন্ডার জমা দিলেও বাছাইয়ে রাখা হয় তিনটিকে। এর মধ্যে সিএনএসও ছিল। চীনা কোম্পানি সিআরবিসি প্রস্তাব দেয় ৬০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার, বেইজিং আরএইচওয়াই টেকনোলজি ৭৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা আর আনিসুল হকের সিএনএস দেয় প্রায় ৮০ কোটি টাকার প্রস্তাব।


কিন্ত যমুনা সেতু পরিচালনায় অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দেওয়া হয়। তাদের প্রস্তাব ছিল ৫৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার।

ঠিকাদার মোবারক হোসেন বলেন, ‘টেন্ডার কিনলো ৫০টি, ড্রপ করছে ১০টি। ওপেনিংয়ের সময় দুটি কোম্পানি আর্নেস্ট মানি দেয়নি। আটটির মধ্যে আমি ছিলাম লোয়েস্ট। কিন্তু আমারটা বাদ করে দিল। পরে সরকার যখন পরিবর্তন হয়ে গেল, তখন তড়িঘড়ি করে চাইনিজ কোম্পানিকে কাজ দিল। সিএনএসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। গতবার সিএনএসকে দিয়েছিল।’ 

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে যমুনা সেতুতে টোল আদায় শুরু করেছে চীনা কোম্পানি সিআরবিসি। তবে, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেওয়ায় পাঁচ বছরে সরকারের ক্ষতি ২০ কোটি টাকা। সেতু বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কয়েকটি কোম্পানি সব কাজ দখলে রেখেছিল বলে অভিযোগ বঞ্চিতদের। যদিও তা অস্বীকার করেছেন প্রধান প্রকৌশলী।

সেতু বিভাগ প্রধান প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস বলেন, ‘যতগুলো বিট দাখিল করে আমরা তাদের ফাইনানসিয়াল প্রোপোজালটা লক করে দিই। আমরা টেকনিক্যাল প্রোপোজালটা ইভালুয়েশন করি, যারা রেসপন্সিভ হয় শুধুমাত্র তাদের আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়। এই আর্থিক প্রস্তাবের মধ্যে যারা লোয়েস্ট হয় তাদের কাজ দেওয়া হয়।’


মার্গা নেট ওয়ান লিমিটেডের পরিচালক মনোয়ার হোসেন খালিদ বলেন, ‘টেকনিক্যাল পার্টে ওরা ওদের পছন্দমতো কোম্পানিকে সিলেক্ট করে অন্তত তিনটি। এ জন্য ওরা ওই তিনজনের টেন্ডার খোলে। অসাধু কিছু কর্মকর্তা আছেন, তারা এই প্রসেসটি করেন। ইউরোপিয় কোম্পানির সাথে জয়েন্ট ভেনচার হওয়ার কারণে আমাদের টেকনিক্যালি হাই পয়েন্ট, তখন তারা বলেন -আপনাদের তো এইটা নাই, ওইটা নাই। আমতা আমতা করে সঠিক উত্তর দিতে পারে না।’ 

যে তিনটি কোম্পানি কাজের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হয়, তাদের কে কত নম্বর পেয়েছে এবং অন্যদের কেন দেওয়া হয়েছে, এসব জানতে চাইলে সেতু সচিব বা প্রধান প্রকৌশলী কথা বলতে রাজি হননি।  

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, দরপত্র প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হলে খরচ বাড়ে। যা টানতে হয় যাত্রীদের। 

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামসুল হক, ‘আগের সরকারে টেন্ডার ছিল লোক দেখানোর। কাকে কাজটা দেবে সেই হিসেবে সব আয়োজন থাকতো। কোন প্রক্রিয়ায় চুক্তি হয়েছে, ডাইরেক্ট বেনিফিটেড কারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার যেটার স্পেস এখন হয়েছে। প্রকিউরমেন্ট দুর্নীতিমুক্ত করতে স্বাধীন থার্ড পার্টি দিয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করে।’ 


সেতুসহ বিভিন্ন সড়ক অবকাঠামোর টোল আদায়ে বিদেশি নির্ভরতা কমালে সাশ্রয় হবে বলেও মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
 

জনপ্রিয়