১৬ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বাইরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। দেশে ও বিদেশে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন ও ২০ বছর কারাদ- থেকে খালাস পেলেও তার বিরুদ্ধে আরো চারটি মামলায় সাজা পরোয়ানা রয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ আইনজীবীরা জানান, গত ১৭ বছরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতি, মানহানি, রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৮০টির বেশি মামলা হয়েছে। তবে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তত ৪০টি মামলায় খালাস কিংবা অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। সবশেষ গতকাল ২১ আগস্ট মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাস পেলেন। একই দিন সিলেটে রাষ্ট্রদ্রোহের দুই মামলাতেও তিনি অব্যাহতি পান।
আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় ৯ বছর, বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগের মামলায় ৭ বছর এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তির অভিযোগে মানহানির একটি মামলায় দুই বছরের কারাদ- রয়েছে। প্রতিটি মামলাতেই তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আইনের বিধান অনুযায়ী, এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার বিষয়টি উল্লেখ করে শীর্ষ আইনজীবীরা বলেন, এ ধারায় সরকারের নির্বাহী আদেশে আপিল কিংবা অন্য শর্তে সাজা মওকুফে বিধান রয়েছে। আপাতত এই আইনি প্রক্রিয়াটি তাদের চিন্তাভাবনায় রয়েছে। যদি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে পরবর্তী সময়ে যেসব মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সেগুলোতে আপিল করে আইনি মোকাবিলা করবেন।
গত ৬ আগস্ট ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপির চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের মা বেগম খালেদা জিয়ার দুই মামলার সাজা মওকুফ হয়। তবে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ইতিমধ্যে আপিলের পর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার সাজা বাতিল করেছে হাইকোর্ট।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ গ্রেফতার হন তারেক রহমান। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৮ মাস কারাভোগের পর বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন পেয়ে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। মুক্তি পেয়ে একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি চলে যান যুক্তরাজ্যে। তিনি ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানেই আছেন। তবে, বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই যোগাযোগ আরো বেড়েছে।
আরো যেসব মামলায় সাজা রয়েছে তারেক রহমানের : অর্থপাচারের একটি মামলায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাসের রায় দেয়। দুদকের এই মামলায় তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে দেয়া হয় সাত বছরের কারাদন্ড। অধস্তন আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছর কারাদন্ডাদেশ দেয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আসামি করা হয় তারেক রহমানকে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি বিশেষ আদালত এক রায়ে তারেক রহমানকে ১০ বছর কারাদন্ড দেন। একই মামলায় তার মা খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদ- দিলেও দুদকের আপিলের পর সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। গত বছর ২ আগস্ট জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের একটি মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদ- দেয় বিশেষ জজ আদালত। এছাড়া ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মানহানির একটি মামলায় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের একটি আদালত তারেক রহমানকে দুই বছর কারাদন্ড দেয়।
বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনো কিছু মামলা আছে। তবে, ইতিমধ্যে ৪০টি মামলায় তিনি খালাস বা অব্যাহতি পেয়েছেন। আর যে মামলাগুলো রয়েছে সেগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে, কয়েকটি মামলায় তার সাজা রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের বড় বাধা ছিল ২১ আগস্ট মামলা। সেটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। এখন আরো যে মামলাতে তার সাজা হয়েছে সেগুলোতে তিনি না এলেও আইনগতভাবে তার সাজা মওকুফের আবেদনের বিষয়টি আমাদের চিন্তাভাবনায় আছে। তবে, তিনি মামলাগুলো আইনিভাবেই মোকাবিলা করতে চান।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ৪০১ ধারায় আমরা আপিলের শর্তে আবেদন করতে পারি। তবে, সাজা মওকুফের পর সেই মামলাগুলোতে আপিল করে আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে।