গত ১৫ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ মামলা দায়ের করা হয়। এতে আসামি প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মী। বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের নেতাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়। বিএনপির এমনও নেতা রয়েছেন, যার বিরুদ্ধে ৪৫১টি মামলা দায়ের হয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক পর্যন্ত দেয়া হয় একের পর এক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা।
বিএনপির অভিযোগ, দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের সাধারণ কর্মী পর্যন্ত এমন কেউ নেই যাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকারের সময়ে কোনো মামলা দেয়া হয়নি।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ মামলা দেয়া হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে, যার ৯৯ ভাগই মিথ্যা ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা।
বিএনপির দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব ছাড়াও অন্যান্য নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৭টি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ৪টি, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩টি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার ১৯টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪৮টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ৩২টি, ড. আব্দুল মঈন খানের ১টি, নজরুল ইসলাম খানের ৬টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ৬টি, সালাহউদ্দিন আহমেদের ৩৫টি, বেগম সেলিমা রহমানের ৪টি ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দেওয়া হয়।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১৩৪টি, মিজানুর রহমান মিনুর ১৮টি, জয়নাল আবেদীন ফারুকের ১২টি, প্রফেসর জয়নাল আবেদনীনের (ভিপি) ৭টি, মনিরুল হক চৌধুরীর ৩টি, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ১৪টি, হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা।
ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ৩টি, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের ৭টি, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম ৫টি, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ১১টি, বরকত উল্লাহ বুলুর ১৩৫টি, মো. শাহজাহান ১৭টি, আব্দুস সালাম পিন্টুর ১৯টি, মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর ৯টি, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ৪টি, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ১৭টি, শামসুজ্জামান দুদুর ১১টি, অ্যাড. আহমদ আযম খানের ৬টি, অ্যাড. জয়নুল আবেদীন ১৮টি, অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৯টি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ৪৯টি, এম কে আনোয়ার ১৯টি, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ৪১টি ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ২৮টি, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ৪টি ও সাদেক হোসেন খোকা ২৭টি মামলা নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা ১৮০টি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাড. শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ১১৯টি, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের ১৫টি, অ্যাড. মজিবুর রহমান সরোয়ার ১৪টি, অ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ২৫৪টি, খায়রুল কবির খোকনের ২১টি, হাবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪৫১টি মামলা, হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ১৪টি, ফজলুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ১৭টি।
সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদের বিরুদ্ধে ৪১টি, মাহবুবের রহমান শামীমের বিরুদ্ধে ৯টি, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ৪৭টি, বহিষ্কৃত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ১৯টি, আসাদুল হাবিব দুলুর ১৪টি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের ৩টি, অ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিনের ১৭টি ও শামা ওবায়েদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা।
বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনের বিরুদ্ধে ২টি, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর ৪৭টি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ আহমেদ তালুকদারের ১১টি, ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ৪টি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালের ১৭টি, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মো. আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৫টি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বলের ৩টি, প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেনের ৯টি, কৃষি সম্পাদক শামসুজ্জোহা খানের ৭টি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুর ৮৭টি, গণশিক্ষা সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়ার ৫টি, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং বিএনপির বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ১৬টি, পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তীর ৭টি, গ্রাম সরকার সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবুর ৫টি, কারাবন্দি প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ৩৮টি, শিশু সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর ৬টি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমজাদ হোসেনের ৪টি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসাইনের বিরুদ্ধে ২৫টি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহিন শওকতের ৫টি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের বিরুদ্ধে ২১টি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নুর ৪০টি, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের বিরুদ্ধে ১২৬টি মামলা দেয়া হয়।
অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশিরের ৯টি, অ্যাড. সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়ার ১১টি, আবু সাঈদ চাঁদের ১৪টি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের ২২টি, মেজর হানিফের ৫টি, আকবর আলীর ১০টি, একেএম সেলিম রেজা হাবিবের ৬টি, মাহমুদুল হক রুবেলের ৯টি, অ্যাড. খোরশেদ আলমের ৭টি, অ্যাড. খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলুর ৩টি, হাসান উদ্দিন সরকারের ৯টি, আমিনুল ইসলামের ২৫টি, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টুর ১৪টি, তারিকুল আলম তেনজিংয়ের ৫টি, আবদুস সাত্তার পাটেয়ারীর ১৩টি, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের ২১টি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমাতে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলার পথ বেছে নেয়। আমাদের এমন কোনো নেতা নেই যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, ছয় শতাধিক মানুষকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার আইন ও আদালতকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর হয়রানি করা হয়েছে।