দশ দিনের সফরে শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন এবং এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সেরেছেন প্রাথমিক আলাপ। সাক্ষাৎকালে ফখরুল দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। এই পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে লন্ডনে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে লন্ডনে গেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নানা বিষয়ে আলাপের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়টিও তাদের আলোচনায় থাকছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকে নানা বিষয়ে সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলে আসছে। বিএনপিও জরুরি সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
অর্ন্তর্বতী সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা, বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার অধিকতর প্রচারণা ও কার্যকর করা, দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও গতিশীল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর আন্দোলন-কর্মসূচির চাপ না থাকলেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তারা। সেজন্য নানা কৌশলে এগোচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা—এ দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তারা রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া দুটিই সমান্তরালভাবে চালানোর পক্ষে।
ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ না পেলে আগামী মার্চ থেকে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। এই পরিস্থিতিতে দলের মহাসচিব লন্ডন সফর করছেন।
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার চান বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। তাদের মতে, দেশের জনগণের কাছে মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। আর মানুষকে সেবা প্রদানের দায়িত্ব হলো নির্বাচিত সরকারের। নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে যে-ই সরকার গঠন করুক না কেন, মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাই বিএনপির টার্গেট।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যাতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে নামতে পারি।