নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস স্থাপন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ নিউজিল্যান্ড একটি অন্যতম সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসনের সূচক বিবেচনায় নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি অন্যতম সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে সুপরিচিত। দেশটি মানবউন্নয়ন সূচকে ১৬তম ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে ৩২তম অবস্থানে রয়েছে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এ দেশটি বাংলাদেশি পণ্যের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে। সেবা শিল্প নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত। সেবা খাতের পাশাপাশি উৎপাদন, নির্মাণ শিল্প, কৃষিকাজ, কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণ নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতিতে অবদানকারী অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাত। এরই প্রেক্ষাপটে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।
গত ৫ ডিসেম্বর প্রধান উপদষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
মুখপাত্র বলেন, নিউজিল্যান্ডে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন এবং প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ হাইকমিশন স্থাপিত হলে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে সরাসরি দূতাবাসের সব ধরনের কনস্যুলার সেবা পৌঁছানো সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
এছাড়াও বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, কম্বোডিয়ায় ও আফ্রিকা মহাদেশে অন্তত ১০টি পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশ মিশন এবং চীন, ব্রাজিল, জার্মানি, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আরও ১০টি সাব-মিশন স্থাপন করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও গভীরতরকরণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি রবার্ট কাপরথের নেতৃত্বে একটি ট্রেজারি প্রতিনিধিদল গত ৭ থেকে ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা সফর করেন। সফরকালে তারা বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যাংক খাতের সংস্কার ও রাজস্ব আহরণে গতিশীলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট এই বৈঠকসমূহে টেকসই সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়নে পারস্পারিক সহযোগিতায় দুদেশ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে জোর আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য টিকফা আলোচনার পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চের নেতৃত্বে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল গত ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর তারিখে বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে তারা বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, শিল্প নকশা এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকসমূহে বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সংরক্ষণ নীতি, বাণিজ্য পরিবেশের উন্নয়ন, শুল্ক ব্যবস্থাপনা আধুনিকরণ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে এ সব বিষয়ে পারস্পারিক সহযোগিতাসহ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সফরকালে প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, থিংক ট্যাঙ্ক ও বাণিজ্য সংস্থাসমূহের সঙ্গেও আলোচনা করেন।