পাসিং আউট প্যারেড দিয়ে নভেম্বরের শুরুতে শেষ হওয়ার কথা ছিল পুলিশের উপপরিদর্শকদের (এসআই) প্রশিক্ষণ। দুই দফায় সময় নির্ধারণের পর ৪০তম এসআই ক্যাডেটদের প্যারেড স্থগিত হয়। দফায় দফায় ভেরিফিকেশনের পর অবশিষ্ট ৫১০ জনের পাসিং আউট প্যারেড হতে যাচ্ছে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে।
দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্যারেড অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একাডেমি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঞা।
বুধবার তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসআই ক্যাডেটদের পাসিং প্যারেডের প্রস্তুতি চলছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি।
অনিবার্য কারণ দেখিয়ে প্যারেড স্থগিতের পর অনিশ্চয়তায় পড়েন প্রশিক্ষার্থী ক্যাডেটরা। এর মধ্যেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ৮২৩ সদস্যের মধ্যে ৩১৩ জনকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি।
তিন দফায় ৩১৩ জনকে অব্যাহতি দেয়া হলেও নতুন করে আর কাউকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে না বলে একাডেমির দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এক কর্মকর্তা বলেন, বাকিদের কয়েক পর্যায়ে ভেরিফিকেশন হয়েছে। এই ৫১০ জনের সবাই প্যারেডে মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর শুরু হয় ৪০তম এসআই ক্যাডেটদের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর প্রশিক্ষণ শেষ করে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে যোগদানের কথা ছিল তাদের। প্রথমবার পাসিং আউট প্যারেডের সময় তারিখ নির্ধারণ হয় ৩১ অক্টোবর, যা অনিবার্য কারণে স্থগিত হয়। পরে নির্ধারিত নতুন তারিখ ২৬ নভেম্বরও স্থগিত করা হয়।
দুই দফায় প্যারেড স্থগিতের পর আতঙ্ক, অনিশ্চয়তায় কাটছে অবশিষ্ট ক্যাডেটদের সময়। একাধিক ক্যাডেট জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণের নির্ধারিত কোর্স শেষ হয়ে গেলেও পাসিং আউট হয়নি। তাই একই রুটিনে প্যারেড ও ক্লাস করতে হচ্ছে। কিন্তু কেউ জানে না, এই প্রশিক্ষণ কবে শেষ হবে। একাডেমির ঊর্ধ্বতনরাও কিছু জানাচ্ছে না।
এক প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট বলেন, আমাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ১২ মাসের। কিন্তু এর প্রায় ১৪ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে আমরা এখনো পুলিশ একাডেমি সারদাতেই আছি। প্রতিটি মুহূর্ত যাচ্ছে মানসিক যন্ত্রণা ও হতাশার মধ্য দিয়ে। বেশিরভাগ ক্যাডেটের পরিবার জমি, গয়না বন্দক, টাকাকড়ি ধার করে এই এক বছর খরচ জুগিয়েছে এবং এখনো কষ্টই করছে।
আরেক ক্যাডেট বলেন, আমরা বেশিরভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সীমিত আয় থেকে বাবা-মা ধার-ঋণের মাধ্যমে ১৪ মাস ধরে আমাদের খরচ বহন করছেন। এখনো আমাদের পদায়ন হচ্ছে না। এটি আমাদের সঙ্গে পরিবারের জন্যও উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে কোনো বেতন পান না প্রশিক্ষণার্থীরা। খাওয়া-দাওয়া ও প্রশিক্ষণের পোশাক সরকার সরবরাহ করে। পাশাপাশি প্রতি মাসে ১ হাজার ৮২৫ টাকা প্রশিক্ষণ ভাতা পান, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। উপরন্তু প্রত্যেকের জন্য নিযুক্ত সহায়তাকর্মীর (রুম বয়) মাসিক বেতন (২ হাজার ৫০০ টাকা প্রতিজনের জন্য) দিতে হয়। ফলে প্রতি মাসে পরিবার থেকে টাকা এনে খরচ করতে হচ্ছে তাদের।
এক ক্যাডেট বলেন, আমাদের ছাঁটাই করা হলে পরিবার নিয়ে এক সীমাহীন দুর্দশায় পড়তে হবে। প্রতিশোধ পরায়ণ বা বিদ্বেষমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের দ্রুত পাসিং আউটের মাধ্যমে পোস্টিং দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সারদা পুলিশ একাডেমির উপাধ্যক্ষ ডিআইজি মো. গোলাম রউফ খান বলেন, পাসিং প্যারেড অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আমরা খুবই আন্তরিক। আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রয়েছে। তারিখ নির্ধারণ হলেই আয়োজন সম্পন্ন করব।