মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে।
সম্প্রতি নিজেদের লন্ডন প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি।
জানা গেছে, স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস। তিনি দেখতে পান বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মার্কিন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। গত মাসের ৯ তারিখে এফবিআই’র একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মানিলন্ডারিং অ্যান্ড লিগ্যাল ইউনিটের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিপুল পরিমাণ দলিল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে এফবিআইয়ের প্রতিনিধি দলটি।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত মাসের ১ তারিখে বাংলাদেশে ইইউ ডেলিগেশনের হেড অব কো-অপারেশন মাইকেল ক্রেজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎতে পাচার হওয়া তহবিল প্রত্যাবাসন ও কমিশনের পরিচালন সক্ষমতা বাড়াতে কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা আরো জানায়, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদের মামলায়’ সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম নজরে আসে। এফবিআইয়ের তদন্তে জয়ের গুরুতর আর্থিক অসদাচরণের বিষয়টি উঠে আসে। বিশেষত জয়ের নামে হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং লন্ডন ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরিত করার তথ্য সামনে এসেছে।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিচার বিভাগের একজন বিশেষ এজেন্ট জানিয়েছেন, কেম্যান আইল্যান্ড ও হংকংয়ের শেল কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে ৩০ কোটি ডলার জমা হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনা অনেকাংশেই সত্য। আমরা ভবিষ্যতে আরো সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে পারি। এ বিষয়ে আমরা পরে সরাসরি কথা বলব।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এ অভিযোগ অধিকতর তদন্তের জন্য দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেপজা ও বেজার আওতাধীন ৯টি অগ্রাধিকার উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, জয়, হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ওঠা ৭০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশ্রয়ণসহ আরও কিছু প্রকল্প।
অভিযোগ আছে, শুধুমাত্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ৭০০ কোটি ডলারের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকসহ তার পরিবারের নামও রয়েছে। আরো অভিযোগ আছে, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অস্ত্র সরবরাহের একটি চুক্তির মধ্যস্থতা করছিলেন টিউলিপ। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছিল।
সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০০৯ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।