ঢাকা শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫ , ২৭ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

সংস্কার কমিটিগুলো নির্দেশনা পেতে পারে মিজানুর রহমান খানের লেখায়

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৫:৪৬, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

সংস্কার কমিটিগুলো নির্দেশনা পেতে পারে মিজানুর রহমান খানের লেখায়

মিজানুর রহমান খান একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি ছিলেন সেলফ ক্রিয়েটেড পারসন। নিজেকে নিজে তৈরি করেছেন। তার সংবিধান ও আইনের লেখাগুলো এতো সহজ, সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন। তিনি কেবল সাংবাদিক ও লেখকই নন, সংস্কারকও বটে। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কমিশন গঠন করেছে, সেগুলোর দুএকটি বাদে প্রায় সব কমিশনই তার লেখা থেকেই নির্দেশনা নিতে পারে। এসব বিষয়ে তার গভীর অনুসন্ধানী লেখা ও মতামত গত দুই দশকে প্রকাশিত হয়েছে।

এসব বক্তব্য মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় অংশ নেওয়া বক্তাদের। শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে দৈনিক আমাদের বার্তা মিলনায়তনে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে বক্তারা আরো বলেন, ব্যক্তি মিজান ছিলেন অত্যন্ত সহজ, সরল, সৎ, ব্যক্তিস্বার্থহীন নির্লোভ একজন মানুষ। স্পষ্টভাষী। ছোটবেলা থেকেই কোনো সময়ে কোনো ধরনের স্বার্থপরতার কাজ তার ছিলো না। তারই ধারবাহিকতায় তিনি তার কর্মজীবনে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করেছেন। আমাদের কাছে মিজানুর রহমান খান বেঁচে থাকবেন অনুপ্রেরণা হয়ে।

অনুষ্ঠানে আইন-আদালত, সংবিধান বিষয়ে সাংবাদিকতায় মিজানুর রহমান খান স্মৃতি পুরস্কার প্রণয়নের ঘোষণা দেন সাবেক সফল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন।

অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন- বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, মিজানুর রহমান খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু খালিদুর রহমান খান, ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক মাছুম বিল্লাহ, টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্যাব) সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান গাজ্জালী, সিনিয়র সাংবাদিক নোমানুল হক, সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জহুরুল ইসলাম মুকুল, একাত্তর টিভির সাংবাদিক শাহনাজ শারমীন, সিনিয়র সাংবাদিক বোরহানুল হক সম্রাট, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলাম, দৈনিক আমাদের বার্তার ফটো এডিটর বুলবুল আহমেদ, শিক্ষক নেতা গোলাম রসুল সানি, মনোয়ারা সিকদার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. নন্দিতা খান, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী পূরব খান, সাংবাদিক আল মাসুদ নয়ন, মোহনা টেলিভিশনের রিপোর্টার এম আর আসাদ ও নিয়াজ স্বপন।

স্বাগত বক্তব্য দেন মিজানুর রহমান খানের অনুজ দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান। মিজানুর রহমানের জীবনী পাঠ করেন দৈনিক আমাদের বার্তার সিনিয়র রিপোর্টার সাবিহা সুমি।

সিদ্দিকুর রহমান খান তার বক্তব্যে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনেকেই তাদের ট্যাগ মিজানুর রহমান খানের নামে চাপানোর চেষ্টা করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বশেষ তিনি যে পত্রিকায় চাকরি করেছেন সেই পত্রিকাও তাকে তাদের সাংবাদিক বলে দাবি করেন। কিন্তু, মিজানুর রহমান ওই পত্রিকায় যোগ দেয়ার আগেই সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার অধিকাংশ দুনিয়া কাঁপানো রিপোর্ট তার আগেই প্রকাশিত। তাকে একভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, ক্ষণজন্মা পুরুষ মিজানুর রহমান খান। তিনি একজন সেলফ ক্রিয়েটেড পারসন। নিজেকে নিজে তৈরি করেছেন। তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেননি। কিন্তু আইন নিয়ে তিনি গভীরভাবে লিখেছেন। তিনি যুক্তির মধ্য দিয়ে সেন্সরশিপ কেটেছেন। ঠিক যেনো ছুরি দিয়ে মাখন কাটার মতো। এই একজনের ক্ষুরধার লেখনি, এটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। আমরা যারা লিখতে চাই, শিখতে চাই, তাদেরকে মিজানুর রহমান খানকে অনুসরণ করা উচিত। রাজনৈতিক সমস্যা তিনি এমনভাবে বিশ্লেষণ করে নিয়ে আসতেন, সেটা সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতো। তার লেখনী আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তারা লেখালেখি করবেন, গবেষণা করবেন, সাংবাদিকতা করবেন, তাদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। আইন-আদালত, সংবিধান নিয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে মানুষ জানবে, শিখবে। মিজানুর রহমান খানের নামে এ বিষয়ে পুরস্কার প্রবর্তন করা হবে।

বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার যে কয়টা সংস্কার কমিশন করেছে তার প্রায় সবগুলোর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সুপারিশ মিজানুর রহমান খানের বিভিন্ন লেখার পরিষ্কারভাবে বিবৃত। সেগুলো বর্তমান সরকার কাজে লাগাতে পারছে।

অধ্যাপক মাজহারুল হান্নান বলেন, মানুষের যেসব গুণাবলী থাকা দরকার সেগুলোর অধিকাংশই প্রকাশ পেয়েছে মিজানুর রহমানের ভেতরে। তার লেখাগুলো লিপিবন্ধ করে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হোক। আজ মিজানুর রহমান খানের জন্য আমরা কাঁদছি। তার শূন্যস্থান আর পূরণ হবে না। তার সব লেখা নিয়ে সংকলন ও স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করার পরামর্শ দিনে মাজহারুল হান্নান।

খালিদুর রহমান খান বলেন, ব্যক্তি মিজান ছিলেন অত্যন্ত সহজ, সরল, সৎ, ব্যক্তিস্বার্থহীন নির্লোভ একজন মানুষ। ছোটবেলা থেকেই কোনো সময়ে কোনো ধরনের স্বার্থপরতার কাজ তার ছিলো না। তারই ধারবাহিকতায় মিজান তার কর্মজীবনে যে স্বপ্ন দেখতেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করেছেন। পেশাগত ক্ষেত্রে সবাই পদ-পদবীর জন্য লালায়িত থাকেন। কিন্তু তিনি ছিলেন এ সবের বাইরে মানুষ। তিনি কোনো ব্যাক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করেছেন এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তিনি ছোটবেলায় মুরুব্বিদের বকা খেলে লিখে প্রতিবাদ জানাতেন। তার পেশাগত জীবনেও আমরা দেখেছি, মিজান এমন এক সভ্যতার পথিকৃত, যিনি লিখে প্রতিবাদ জানানোর কাজটি করেছেন। তিনি বাণিজ্যের ছাত্র থেকে আইনের মানুষ হয়ে উঠেছেন। এ বিষয়ে তিনি স্বশিক্ষিত। তিনি একজন সমাজ সংস্কারক। আমাদের কাছে মিজান বেঁচে থাকবে অনুপ্রেরণা হয়ে।

পূর্ববর্তী বক্তার বক্তব্যের সূত্র ধরে মাছুম বিল্লাহ বলেন, মিজানুর রহমান খান সত্যিকার অর্থেই একজন সংস্কারক ছিলেন।

মিজানুর রহমান খান এমন একটি পরিবেশে লিখেছেন, সাংবাদিকদের অনেক দুর্দিন ছিলো। মিজানুর রহমান খান আজ বেঁচে থাকলে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও লিখতেন।

জিয়া ইসলাম বলেন, মিজান ভাইকে ঈর্ষা করতাম। কারণ, প্রথম আলোতে তার তোলা একটা ছবি ছাপানো হয়েছিলো। দুই বাসের চাপায় শাহবাগে একজনের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই ছবি। সব বিষয়েই তাঁর বোঝার ক্ষমতা ছিলো বেশি। তাঁর কাজের স্পিড ছিলো অসাধারণ।

শাহনাজ শারমীন বলেন, তার আইনের লেখাগুলো এতো সহজ, সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। তার কাছে সাংবাদিকতার প্রয়োজনে বহুবার গিয়েছি। তিনি কখনো বিরক্ত হননি। মিজান ভাইয়ের আরো দীর্ঘদিন থাকার দরকার ছিলো।

বুলবুল আহমেদ বলেন, মিজান ভাই মাঝে মাঝে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসতেন। তাকে নিচে পাওয়া যেতো না। ক্যান্টিনে পাওয়া যেতো না। তাকে পাওয়া যেতো লাইব্রেরিতে। তিনি অনেক বই সংগ্রহ করিয়েছেন প্রেস ক্লাবে।

মতিউর রহমান গাজ্জালী বলেন, শুধু আইনজ্ঞরা নন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপকরাও তাকে গভীরভাবে অনুসরণ করতেন। তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী মানুষ। তিনি সবসময়ই শান্তির প্রত্যাশা করেছেন।

জহুরুল ইসলাম মুকুল বলেন, মিজান ভাই খুব ছুটতে পারতেন। মিজানের বিবেচনায় বিচারপতিরা অবসরের পর অন্য কাজে নিয়োজিত হতে পারবেন আগের বেতনে। কিছু সুবিধা বাদ দিয়ে। কিন্তু সেটি হয়নি। ক্ষুরধার লেখনির কারণে তাকে আদালতে ডেকে ‘শিক্ষা’ দেয়া হয়েছে। কিন্তু, কিছুই তাকে তার কাজ থেকে দমাতে বা সরাতে পারেনি। মিজানুর রহমান খানের লেখায় কখনো রাজনৈতিক এফিলিয়েশন ফোটেনি। এই তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কমিশন গঠন করেছে, দুএকটি বাদে প্রায় সব কমিশন তার লেখা থেকেই নির্দেশনা নিতে পারে। এসব বিষয়ে তার গভীর অনুসন্ধানী লেখা আছে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে আরো অনেক বিষয়ে লেখার ছিলো।

ডা. নন্দিকা খান বলেন, তিনি যখন করোনায় আক্রান্ত, তখন আমি মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। একদিন শুনলাম, তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পরে তাকে আইসিইউতে নেয়া হলো। আমি যে আজ ডাক্তার, তিনি তা দেখে যেতে পারলেন না। ভবিষ্যতে তার নামে কিছু করতে চাই।

গোলাম রসুল সানি বলেন, মিজানুর রহমান ছিলেন একজন নির্মোহ, সৎ সাংবাদিক।

নোমানুল হক বলেন, মিজানুর রহমান খানের প্রথম বই এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল। মিজানুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার সাহস দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি।

জনপ্রিয়