ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ , ২৯ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ভারতে পাঠ্যবই ছাপা দেখতে কোটি কোটি টাকা অপচয়

জাতীয়

বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

ভারতে পাঠ্যবই ছাপা দেখতে কোটি কোটি টাকা অপচয়

বিগত বছরগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের স্কুল পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ তদারকির নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। অতি গোপনে বড় লটবহর নিয়ে কখনো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, কখনো প্রতিমন্ত্রী, আবার কখনো শিক্ষামন্ত্রী ভারতে গেছেন। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তাদের অধীনস্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপু্স্তক বোর্ড ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। এছাড়া মাস্তি করে ভারতীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশীয় এজেন্টরা প্রচুর টাকা খরচ করেছেন যেসবের কোনো হিসেবই নথিবন্ধ রাখা হয়নি।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আনুকুল্যে বছরের বিভিন্ন সময়ে তদারকির নামে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা হয়ে উঠেছেন ভ্রমণ বিলাসী। সরকারি টাকার এমন বেহিসেবি অপচয়ের প্রভাব পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বইয়ের পাতায়। খারাপ হতো ছাপার মান। বছরের বিভিন্ন সময়ে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের ভারত ভ্রমণের ধুম পড়ে যেতো। জানুয়ারি মাস পেরিয়ে গেলেও ভারতে ছাপা হওয়া বই বাংলাদেশে আসতো না। আবার নিম্নমানের ছাপা হলেও তদারকিতে যাওয়া কর্মকর্তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করতেন না।

২০১১ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৩২ লাখ টাকার মতো বিভিন্ন সময়ে ভ্রমণ বাবদ এনসিটিবির ফান্ড থেকে কর্মকর্তারা খরচ করেছেন।

ভারতে পাঠ্যবই ছাপা দেখতে কোটি কোটি টাকা অপচয়

গত বছরের পাঁচ আগস্ট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর বই ছাপানোর বেহুদা খরচ আলোচনায় এলে দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা। তিনি মোট তিনবার বই ছাপানো তদারকির নামে ভারত ভ্রমণ করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে তিনি ভারতে বই ছাপানোর তথাকথিত তদারকি করতে খরচ করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস শেষ হলেও ছাপা হয়ে দেশে পৌঁছায়নি প্রাথমিক স্তরের ৩৩ লাখ পাঠ্যবই। ভারতের মুম্বাইয়ের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান 'শীর্ষাসাই' সময়মতো পাঠ্যবই ছেপে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। ওই শিক্ষাবর্ষে ৫৯ লাখ পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ পেয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি। তার মধ্যে মাত্র ২৬ লাখ বই সরবরাহ করেছে ২৩ জানুয়ারির পর।

এনসিটিবি জানায়, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের ৯৮ লটের মধ্যে ১৬ লটে এক কোটি ৮০ লাখ বই ছাপার কাজ পায় ভারতীয় তিনটি প্রতিষ্ঠান। সময়মতো বই দিতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা ও নিম্নমানের কাগজের ছাপা হলেও তৎকালীন এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহার তদারকি প্রতিবেদনে তার উল্লেখ নেই। অথচ নারায়ণ সাহা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে ফের ভারত ভ্রমণে গিয়ে এনসিটিবির তহবিল থেকেই খরচ করেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭২ টাকা।

এ ছাড়াও তিনি ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ভারতে ভ্রমণে গিয়ে খরচ করেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৯ টাকা। এনসিটিবির সাবেক উৎপাদন নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুর রহমান ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুনে ভারত ভ্রমণে খরচ করেন ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। তা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ফের সফরে গিয়ে খরচ করেন ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

এনসিটিবির সদস্য মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ভারত ভ্রমণে গিয়ে খরচ করেন ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে গিয়ে খরচ করেন ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. জিয়াউল হক ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে খরচ করেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে খরচ করেন ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রেকর্ড সংখ্যক দফায় ভারত ভ্রমণের নজির রেখেছেন উৎপাদন নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল মজিদ। তিনি ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে ভ্রমণ বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তারপর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা খরচ করেন। এরপর ২০১৩- এর জুনে ১ লাখ ৫৯ হাজার, ২০১৪- এ ১ লাখ ৬০ হাজার ও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা খরচ করেন।

এ ছাড়া বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোশতাক আহমেদ ভূঁইয়ার তিনবার ভারত ভ্রমণে যাওয়ার হিসেবে পাওয়া গেছে। তিনি ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে ভ্রমণ বাবদ খরচ করেন ১ লাখ ৩০ হাজার। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ১ লাখ ৫২ হাজার, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুনে ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ মো. ফরহাদুল ইসলাম ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে খরচ করেন ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এনসিটিবির চেয়ারম্যান হন। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তার চুক্তিভিত্তিক চেয়ারম্যান পদ বাতিল হয়ে যায়।

এনসিটিবির সদস্য মো. নাসিম উদ্দিন ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে ভারত ভ্রমণে গিয়ে খরচ করেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে এনসিটিবির সদস্য নারায়ণ চন্দ্র পাল এ বাবদ খরচ করেনে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১১ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ অব্দি ভারতে বই ছাপা দেখতে তাদের মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

জনপ্রিয়