ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ , ৩০ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

পালাবদলের সময় দিল্লি ও ঢাকার সেনা নেতৃত্বের ’যোগাযোগ ছিলো’

জাতীয়

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

পালাবদলের সময় দিল্লি ও ঢাকার সেনা নেতৃত্বের ’যোগাযোগ ছিলো’

বাংলাদেশে যখন গত আগস্ট মাসে ক্ষমতার পালাবদল হয়, তখন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বাংলাদেশে তার কাউন্টারপার্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাথে 'সার্বক্ষণিক যোগাযোগে' ছিলেন বলে জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের 'প্রক্রিয়া'টি যে দুই বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় করেই সম্পন্ন হয়েছে, তার কথাতে সে ইঙ্গিতও ছিল।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দিল্লিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল দ্বিবেদী সাংবাদিকদের কাছে এক প্রশ্নের জবাবে ওই মন্তব্য করেন। [inside-ad]

বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "বস্তুত সে দেশে যখন পালাবদল ঘটল, তখনও আমি সে দেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলছিলাম। এরপর গত ২০ নভেম্বরও আমাদের মধ্যে একটা ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কও স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।"

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়ে দেশত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশের একটি মিলিটারি এয়ারক্র্যাফটে করে দিল্লির কাছে হিন্ডন এয়ারবেসে এসে অবতরণ করেন।

তখন থেকে আজ পাঁচ মাসের ওপর ধরে তিনি ভারতের মাটিতেই অবস্থান করছেন, যদিও তিনি ঠিক কোন 'স্ট্যাটাসে' রয়েছেন তা ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কখনওই স্পষ্ট করেনি।

তবে শেখ হাসিনা ভারতে এসে নামার ঠিক পর দিনই (৬ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশের পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি যাতে ভারতে এসে নামতে পারে, সে জন্য সে দেশের সেনাবাহিনীর তরফে ভারতের কাছে 'ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স' বা আগাম অনুমতি চাওয়া হয়েছিল।

আজ ভারতের সেনাপ্রধানও কার্যত এটাই নিশ্চিত করলেন যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার এই 'প্রক্রিয়া'টি দুই দেশের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় রেখেই সম্পন্ন হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান ওই পদে এসেছিলেন ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঠিক মাসদেড়েক আগে।

আর জেনারেল মনোজ পান্ডের জায়গায় ভারতের ৩০তম সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী দায়িত্ব নেন গত বছরের ৩০ জুন – অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকার তাদের নতুন সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করার ঠিক সাতদিনের মাথায়।

এরপর থেকে দুই দেশের দুই সেনাপ্রধান যে আগাগোড়া নিজেদের মধ্যে নিয়মিত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছেন, জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী তা আজ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন।[inside-ad-1]

তিনি এদিন বাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আমাদের (দুজনের) মধ্যে সব সময় যোগাযোগ আছে।"

ভারতে পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ প্রথম থেকেই বলে আসছেন শেখ হাসিনাকে ভারত নিজে থেকে ডেকে আনেনি – বরং তিনি সে দেশের সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন সমর্থনেই ভারতে এসেছিলেন।

ভারতের সেনাপ্রধানের এদিনের বক্তব্য তাদের ওই যুক্তিকেই সমর্থন করছে বলে ওই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

'সামরিক সহযোগিতা অক্ষুণ্ণ আছে'

বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতা আগের মতোই অক্ষুণ্ণ আছে বলে এদিন দাবি করেন ভারতের সেনাপ্রধান।

জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, "বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত তাদের জন্য স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে দিকে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইব।"

"উনি যেমন বলেছেন ভারত তাদের জন্য স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, উল্টোদিকে কথাটা কিন্তু আমাদের দিক থেকেও সত্যি। মানে বাংলাদেশও আমাদের কাছে স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।"

তিনি আরো বলেন, "বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটা ছোট অংশ বাদ দিলে তাদের সীমান্তের সব দিকেই তো ভারত। ফলে আমরা পরস্পরের প্রতিবেশী, আমাদের একসঙ্গেই থাকতে হবে ও পরস্পরকে বুঝতে হবে – যে কোনও ধরনের শত্রুতা আমাদের উভয়ের জন্যই হানিকর।"

এই পটভূমিতেই দুই দেশের সামরিক বাহিনী ও তাদের নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে বলে তিনি জানান।

ভারতের সেনাপ্রধানের কথায়, "আজকের তারিখে আমাদের কোনও পক্ষেরই আক্রান্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা ('ভালনারেবিলিটি') নেই। আমার সে দেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ আছে।"

এর পরই তিনি জানান, বাংলাদেশে যখন ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে, তখনও তারা দুজন নিজেদের মধ্যে সব সময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন। পরেও সেই সম্পর্কে কখনও ভাঁটা পড়েনি।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতাও আগের মতোই যেমন চলছিল তেমনই চলছে বলেও তিনি দাবি করেন।

"আমাদের অফিসাররাও এনডিসি-র জন্য যথারীতি সেখানে গেছেন, সে দিক থেকে কোনও সমস্যাই নেই।"

"শুধু আমাদের যে যৌথ সামরিক মহড়া হওয়ার কথা ছিল, সেটা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেটাও পরে অনুষ্ঠিত হবে", জানান জেনারেল দ্বিবেদী।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে

সামরিক সম্পর্ক অটুট থাকলেও ভারতের সেনাপ্রধান এদিন এ কথাও জানাতে ভোলেননি, দুই দেশের সম্পর্ক তখনই স্বাভাবিক হবে, যখন একটি 'নির্বাচিত সরকার' বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে।

"যদি আপনারা (দুই দেশের) সম্পর্কের কথা বলেন, সেটা ওখানে একটি নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সম্ভব নয়। তবে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক একদম ঠিক আছে, সব নিখুঁতভাবে চলছে", মন্তব্য করেন জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী।

ভারতে সরকার বা নীতি-নির্ধারকদের একটা অংশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে এই মুহুর্তে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের সাংবিধানিক ভিত্তি বা বৈধতা কী, সেটাই আদৌ স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশে নির্বাচনে জিতে নতুন একটি সরকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান সরকারের সঙ্গে দিল্লির 'এনগেজমেন্ট' খুব সীমিত বা 'লিমিটেড' রাখা উচিত বলে অনেকেই যুক্তি দিচ্ছেন – আর ভারত সরকারের কাজকর্ম দেখেও মনে হচ্ছে তারাও ঠিক সেই রাস্তাতেই হাঁটছেন।

আজ ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর কথা থেকেও এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, তিনিও মনে করেন বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার পরেই কেবল দুই দেশের সম্পর্ক আবার সহজ ও স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব!

সূত্র: বিবিসি বাংলা

জনপ্রিয়