পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বেআইনিভাবে ১০ কাঠার দুটি সরকারি প্লট বরাদ্দের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকার ১ নম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয় মামলা দায়ের হয় বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান।
তাঁদের সঙ্গে জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের কর্মকর্তাসহ আরো ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনার নিজ নামে ১০ কাঠার প্লট এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। দ্বিতীয় মামলায় প্রধান আসামী জয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে অপর মামলাটি দায়ের করা হয়।
ইতিমধ্যে পূর্বাচল নতুন শহরে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিককে আসামি করে চারটি মামলা দায়ের করেছে কমিশন।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দের অভিযোগে গত রোববার শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সোমবার রেহানা, ববি ও রূপন্তীসহ ৪৭ জনকে আসাসি করে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ও টিউলিপকে সহযোগী আসামি করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের স্বাক্ষরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে তাঁর নির্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার ছেলের অনুকূলে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় ১০ কাঠা আয়তনের ২টি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেন বলে অভিযোগ।
অভিযুক্তদের অনুকূলে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বিধি মোতাবেক ১০ (দশ) কাঠা আয়তনের ৬টি প্লট বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। এক্ষেত্রে উল্লিখিত বিধিমালার বিধি-৪ ও বিধি-৫ এর বিধান স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুদক বলছে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ও তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ আইন, বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।
দুদক বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ২০ কাঠার দুটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এর আগে ২২ ডিসেম্বর হাসিনা এবং জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনের অভিযোগে দুই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাঁকে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছুদিন কথাবার্তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিতে চিঠিও পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।