চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে বাবরের মুক্তিতে বাধা নেই। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তার খালাসের রায় ঘোষণা করেন।
এর ফলে বাবরের মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আদালতে আইনজীবী শিশির মনির বাবরের খালাস চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। অন্য আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান। পরে উচ্চ আদালতের রায়ে বাবরসহ খালাস পান পাঁচ আসামি। পাশাপাশি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমানো হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড থেকে দেয়া হয়েছে ১৪ বছর কারাদণ্ড।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ পাঁচ আসামি খালাস পান। খালাস দেয়া হয়েছে প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকেও। মারা যাওয়ায় তার আপিল অ্যাবেট (পরিসমাপ্তি) ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া খালাসপ্রাপ্ত অপর চারজন হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কেএম এনামুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন।
রায়ের পর বাবরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘লুৎফুজ্জামান বাবর দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। একুশে আগস্ট ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তাকে দুইবার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। যাবজ্জীবন থেকে খালাস পেয়েছেন। অতঃপর এখন জেল থেকে মুক্তি পেতে তার কোনো বাধা থাকবে না। কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন তিনি।’
শিশির মনির বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ উনার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এনেছিলেন। এর মধ্যে একটিতে বলা হয়—উনার কথায় পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর আবার উনার কথায়ই ছেড়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ উনি প্রভাব খাটিয়ে ছাড়িয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তৎকালীন সচিবের নেতৃত্বে এ মামলায় একটি ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত হয়েছিল, যে কাজে উনি বাধাগ্রস্ত করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ দুটির বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ হলো—যে পাঁচজনকে বাবরের প্রভাবে ছেড়ে দেয়া হয় বলে বলা হয়েছিল, আমরা রেকর্ড থেকে দেখি ওই পাঁচজনই জেলে ছিল। কাউকেই আসলে ছাড়া হয়নি। আর তদন্ত রিপোর্ট বাধাগ্রস্ত করার বিষয়ে বলেছিল। কিন্তু রিপোর্ট যে দাখিল করা হয়েছিল এ বিষয়ে একজন জানেন আরেকজন জানেনই না।’
লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ষষ্ঠ ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে তিনি পরাজিত হন।