১২ বছর পর কারামুক্ত হলেন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
গ্রাহকের ২,২৫৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এর আগে, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ৪,৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪,৪৫৪ টাকা অর্থদণ্ডও দেয়া হয়।
তবে, রফিকুল আমীন গত ১২ বছর ধরে কারাগারে আছেন। রায়ে আদালত জানান, কারাগারে থাকার বয়স সাজা থেকে বাদ যাবে। সেক্ষেত্রে এমডি রফিকুল আমীনের সাজা হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় কারামুক্তি পান।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিকে, রফিকুল আমীনের মুক্তির খবরে বিকেল থেকেই ডেসটিনির সদস্যরা কারাফটকে ভিড় জমাতে থাকেন। সন্ধ্যার পর মুক্ত হয়েই ডেসটিনি এমডি ছাদখোলা প্রাইভেট কার থেকে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য ও কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- ডেসটিনির পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ, প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মো. সাইদ-উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা দিবা ও জামসেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর মো. জসিম উদ্দীন ভূঁইয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আব্দুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী জানান, ১৯ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা রফিকুল আমীন, তার স্ত্রী ফারহা দিবা ও মোহাম্মদ হোসেনকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা হারুনুর রশিদও আদালতে ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক বাকি ১৫ আসামির বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক।
এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করেন।
তার আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কলাবাগান থানায় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই মামলা দুটি করে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মে একটি মামলায় ১৯ জনের এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২,২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯,০৪০ টাকা এবং সরাসরি পাচার করা হয় আরো ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার।
উল্লেখ্য, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়। এছাড়া, হারুন অর রশীদসহ ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।