জুলাই-আগস্ট মাসের সম্মান রক্ষার্থে ওই মাসের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এদেশে গত জুলাই-আগস্ট মাসে সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং জুলাই-আগস্ট মাসের সম্মান রক্ষার্থে আগামী জুলাই আগস্ট মাসের মধ্যেই আপনারা নির্বাচন দিবেন বলে আমি আশা করি।’
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন।
নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ মিয়া ভোলার সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির (চট্টগ্রাম বিভাগ) সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবে রহমান শামীম, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির (চট্টগ্রাম বিভাগ) সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এবং প্রায় সফল হয়েছিলেন। সংসদীয় স্বৈরতন্ত্রের প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন এবং প্রায় সফল হয়ে গিয়েছিলেন। সেরকম একটি একনায়কতান্ত্রিক সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে যদি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে উৎখাত করতে হয় তাহলে বিদ্যমান সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার দ্বারা কোনো গতি নেই। সে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য আমরা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩১ পেশ করি। তার প্রথম দফা ছিল একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে।
‘সেই সংবিধান সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে সেখানে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক সংবিধান সংস্কারের জন্য আমরা ৬২টি প্রস্তাব দিয়েছি। চারটি সরকার কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এর মধ্যে কি রয়েছে এখনো সেটা আমরা পুরোপুরি দেখতে পারেনি। আমরা দেখে তারপর আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাবো। সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশে যে উদ্দেশ্যে সাংবিধানিক একনায়তন্ত্র বিলুপ্তির জন্য পেশ করেছেন তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে এমন কিছু প্রস্তাব আছে যেগুলো জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করি। অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকার কমিশনের রিপোর্টগুলা নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে খুব দ্রুতই আলোচনা ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করি, যেন অযথা সময়কে ক্ষেপন না করা হয়।’
তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর কমিশনের রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল ১৫ দিন পর দিয়েছে সমস্যা নেই। কিন্তু এখন বলছে অগ্রাধিকার নিরূপণের জন্য নাকি আরো একমাস সময়ের প্রয়োজন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে একটি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা- সেটাই একমাত্র অগ্রাধিকার হওয়ার উচিত। সংবিধানের প্রস্তাবনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক পরামর্শ প্রদান করেছেন সংস্কার কমিশন। তার মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে যেগুলো যায় সেগুলো অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। এমন কোন সংস্কার প্রস্তাব বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না, যা জাতিকে আরও অতি সংকটের দিকে ফেলে দিতে পারে।
‘এই জাতিকে নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষা হয়েছে। কিন্তু এবার সুদৃঢ় রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সমগ্র জাতির মধ্যে যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য তৈরি হয়েছে তাকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত সংস্কারগুলো আমাদের করতে হবে। যারা সংস্কার কমিশনগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব করেছেন তাদের মধ্যে এমন কিছু প্রস্তাবনা ছিল, যা রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে যায় না। জনগণ যদি সার্বভৌম হয়, সাংবিধানিকভাবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হচ্ছে সার্বভৌমের প্রতিনিধি। সুতরাং কথা একটায় একটাই যেটি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বলে গিয়েছিলেন। জনগণ হচ্ছে সার্বভৌম শক্তির উৎস, জনগনই ক্ষমতার মালিক। যারা বিভিন্ন রকম সংস্কার প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে চাইবেন আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাব কিন্তু ওখানে অগ্রাধিকারের জনগণের সার্বভৌমত্ব থাকতে হবে। ’
তিনি আরও বলেন, অনির্বাচিত সরকারের দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র পরিচালনার ইতিহাস আমাদের কাছে খুব সুখকর নয়। অতীতের ইতিহাসও খুব সুখকর নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়। শুধুমাত্র অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা বজায় রাখতে অর্থনৈতিক শক্তি বজায় রাখতে সক্ষম।
দেশের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক নেই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক নেই, অনির্বাচিত সরকার কতদিন থাকবে সেটার ঠিক নেই এবং আপনারা কবে রুট ম্যাপ দিবেন তারও কোনো নির্দেশনা নেই। ভাসা ভাসা কথা বলছেন। এত খ্রিষ্টাব্দের শেষে অত খ্রিষ্টাব্দের প্রথমে নির্বাচন হতে পারে। সেটাতে আমরা সন্তুষ্ট নয় এ দেশের জনগণ সন্তুষ্ট নয়।
‘নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে ভোটার তালিকা সহ অন্যান্য কাজ চলমান। অন্যান্য আইনি সংস্কার শুধুমাত্র কাগজি ব্যাপার। অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সময় বেশি এলাকার কথা নয়। অন্যান্য মাঠের সংস্কারের বিষয়টি আইনের উপর নির্ভরশীল। আমরা খুব হিসাব-নিকাশ করে বলেছি বেশি হলে আগামী জুলাই আগস্ট লাগতে পারে একটি অবাধ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। এদেশে জুন মাসে নির্বাচন হওয়ার ইতিহাস আছে। এদেশে ২৪ এর জুলাই আগস্ট মাসে সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং জুলাই-আগস্ট মাসের সম্মান রক্ষার্থে এই মাসের মধ্যেই আপনারা নির্বাচন দিবেন বলে আমি আশা করি।’
তিনি আরও বলেন, কোন একটি মহলকে রাজনৈতিক দল গঠন করার সুযোগ দেয়ার জন্য এবং তাদেরকে অবৈধভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য অন্তবর্তী সরকারের ভূমিকা থাকা উচিত হবে না। আপনারা কাউকে প্রতিপক্ষ করবেন না, আমরা সবাই জনগণের পক্ষ। আমরা কারো প্রতিপক্ষ হতে চাই না। আমি বাংলাদেশে মানুষকে আহ্বান জানাবো, আমরা যেন ফেস্তিবাজ বিরোধী সকল জাতীয় ঐক্যকে ধরে রাখি। আমরা যেন বাংলাদেশী জাতি হিসেবে টিকে থাকি।
মাহাবুবে রহমান শামীম বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলে আমরা বাংলাদেশ নামের একটি দেশ পেয়েছি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গনতন্ত্র এনেছেন। এদেশে বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ।
মীর হেলাল বলেন, বাংলাদেশ যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে সেটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান। প্রথমত কৃষিতে এক জমিনে বার বার ফসল ফলানোর পদ্ধতি চালু। দ্বিতীয়ত শ্রমিক রফতানি। তৃতীয় আরএমডি সেক্টরে এখন পর্যন্ত দেশ যে সুফল ভোগ করছে সেটি তার অবদান। দেশ যতবার সংকটে পড়েছে শহীর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রাহমানের পরিবারের মাধ্যমে সে সংকট থেকে উত্তরণ হয়েছে। আমরা আজকে দিনে এবং ভবিষ্যতের জন্য আস্থা রাখি আমাদের নেতা তারেক রহমানের উপর।