ঢাকা রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ , ৫ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন না দেয়ার চেষ্টা করা হবে: মির্জা ফখরুল 

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন না দেয়ার চেষ্টা করা হবে: মির্জা ফখরুল 

ঋণখেলাপিরা যেন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পান, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

শনিবার ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও বাজেট’ শীর্ষক দিনব্যাপী সিম্পোজিয়ামের শেষ পর্বে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২০২৪। 

সিম্পোজিয়ামের শেষ পর্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঞ্চালক ছিলেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এছাড়াও পৃথক কয়েক অধিবেশনে বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য দেন।

ক্ষমতায় আসলে চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিএনপির ভাবনার বিষয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, দুই বছর আগেই এ বিষয়ে জনগণের সামনে ২১ দফা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছে বিএনপি। এতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পর গণঅভ্যুত্থানের ফলে মানুষের একটি তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে, তারা পরিবর্তন চায়। জনগণ সুখী–সমৃদ্ধি বাংলাদেশ দেখতে চাই। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ছাড়া এ প্রত্যাশা পূরণ করা বেশ কঠিন। এ জন্যই রাজনীতিতে কাঠামোগত কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে– প্রধানমন্ত্রী কেউ দুইবারের বেশি হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি গণতান্ত্রিক চর্চা অনেক বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে।

তিনি বলেন, বিএনপি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যারা নির্বাচন করেন না, কিন্তু দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে পারেন তাদের দ্বিতীয় বা আপার কক্ষে নিয়ে আসার চিন্তা রয়েছে। বৈষম্য দূর করতে কাজ করা হবে। এজন্য নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনে যারা আসবেন এবং আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি সরকার গঠন করা হবে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান গণতন্ত্রের জন্য দরকার সেসব প্রতিষ্ঠানকে গত ১৫ বছরে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সংস্কার কার্যক্রমে করতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, এ ক্ষেত্রে সন্দেহ অমূলক নয়। তবে পারব না এ কথা বলা যাবে না। চেষ্টা করতে হবে। আমরা জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ। অনেকেই আশা করছেন ৬ মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সব পেরে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব না। তাই বিএনপি নির্বাচনে বেশি জোর দিচ্ছে। সংসদে কখনো গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। তারা এটি চেষ্টা করে দেখতে চান। 

সংস্কারের জন্য বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে ছয় মাস সময় দিচ্ছে– এ সময়টা কতটুকু যৌক্তিক অধ্যাপক রেহমান সোবহানের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। এ বিষয়ে তিনি আর বেশি কিছু বলতে চাননি। 

এর আগেই বিভিন্ন সময়ের নির্বাচনের আগের ঋণ খেলাপিদের ছাড় দেওয়া হয়েছে, টাকা ওয়ালাদের অনেক সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হয়, আগামীতে এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থায় কী? এমন প্রশ্নে দলটির মহাসচিব বলেন, রাতারাতি সব পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে জনগণের কাছে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, অবশ্যই ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য সচেতনভাবে চেষ্টা করা হবে। 

আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা এ কথাটি বারবার বলে আসছেন যে, ফ্যাসিবাদী কোনো গোষ্ঠী আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে এ বিষয়ে তারা কিছু বলতে চান না।

প্রশ্ন রেখে অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, এর আগে থাকলেও গত ১৫ বছরে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সমস্যা গভীর হয়েছে। বিএনপি কি নিশ্চয়তা দিতে পারে যে, অতীতের ভুলের দলটি আর পুনরাবৃত্তি করবে না? 
এর জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, অতীতের সব অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। এর আলোকেই তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন।

দ্রুত নির্বাচন সংক্রান্ত এক সমন্বয়কের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে যে, একটি নির্বাচনকালীন সরকারই এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে। কারণ তারা জনগণের ম্যানডেট নিয়ে আসে। 

অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার বক্তব্যে ঋণখেলাপি, অর্থপাচার, ব্যাংক ব্যবস্থার দুরবস্থাসহ দেশের অর্থনীতির নানা দুর্বল দিকের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর কোনোটিই নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে। বিগত ১৬ বছরের জবাবদিহিতা না থাকায় সমস্যাগুলো অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিগত সরকারের অপশাসন ঋণখেলাপির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। পুরো আর্থিক খাত রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত হয়েছে।

এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নয় মন্তব্য করে রেহমান সোবহান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তবে তারা কিছু শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। ভবিষ্যৎ নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের ওপর গুরুদায়িত্ব পড়বে। তাদের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যেসব প্রত্যাশা নিয়ে ছাত্র–জনতা গণঅভ্যুত্থান করেছিল তার তেমন কিছুই পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনার সরকার টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও টাকা ছাপিয়েছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দামে মানুষ যখন মারাত্মক চাপে তখন সরকার ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে জনগণের পকেট থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার তালে রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় ১৪ হাজার কর্মচারী–কর্মকর্তা নাকি ছয় মাস ধরের বেতন পাচ্ছে না। দেশে বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান হচ্ছে না তাই বাড়ছে বেকারত্ব। সরকারের মধ্যে সংস্কার সংস্কার নিয়ে কথা হলেও এসব বিষয়ে তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

জনপ্রিয়