সাংবাদিকের নতুন করে সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কারা সাংবাদিক, কারা প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রাপ্য হবেন তা নির্ধারণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর বিপরীতে কী কী সুবিধা পাবেন কার্ডধারীরা এবং সচিবালয়ে প্রবেশ পদ্ধতি কী হবে এসব বিষয়সহ ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর গণহারে সব প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়। এতে করে সৃষ্টি হয় জটিলতা। সেই জটিলতা নিরসনে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা মতে, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা ২০২২ পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই জটিলতা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিএফইউজে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ সচিবালয় সাংবাদিক ফোরাম (বিএসআরএফ)। অবশ্য পরবর্তীতে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা ২০২২ পুনর্মূল্যায়নের জন্য ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতিকে সদস্য করা হয়েছে।
কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল না করার সুপারিশ ডিআরইউর। একই সঙ্গে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের দাবি করা হয়েছে ডিআরইউর পক্ষ থেকে। তবে সাংবাদিক নামধারী অপেশাদার ব্যক্তিদের কার্ড প্রদান থেকে বিরত থাকতে সুপারিশ করা হয়েছে।
ডিইউজে ও বিএফইউজে থেকে সুপারিশ করা হয়েছে রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য হুমকি এ ধরনের ব্যক্তিরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাবেন না। একই সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয়ধারী ফ্যাসিবাদের চিহ্নিত দোসরদের নামে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড না দেওয়া বা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে আরও সুপাশির করা হয়েছে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল না করার সুপারিশ ডিআরইউর, একই সঙ্গে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করার দাবি। রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য হুমকি- এ ধরনের ব্যক্তিরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাবেন না। একই সঙ্গে মিডিয়া হাউসের বিপরীতে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। সচিবালয়ে প্রবেশ ও বাহির প্রক্রিয়া সহজ করতে ও কার্ডধারীদের তথ্য সংরক্ষণ করতে ডিজিটাল অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের প্রচলন করতে বলা হয়েছে।
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা ২০২২ অনুযায়ী, সাংবাদিকের সংজ্ঞা আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে। সেখানে উল্লেখ আছে- কর্মরত সাংবাদিক অর্থ কোনো ব্যক্তি যিনি সার্বক্ষণিক সাংবাদিক এবং যিনি কোনো সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠান বা সংবাদ সংস্থায় বা তথ্য-সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত আছেন, এবং কোনো সম্পাদক, সম্পাদকীয় লেখক, সংবাদ সম্পাদক, উপসম্পাদক, ফিচার লেখক, রিপোর্টার, সংবাদদাতা, কপি টেস্টার, কার্টুনিস্ট, চিত্রগ্রাহক, সম্পাদনা সহকারীকে বোঝাবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সাংবাদিকের সংজ্ঞা নির্ধারণ বলতে এটা বোধ হয় আরও বেশি স্পেসিফিক করতে চায় সরকার। তবে ফ্যাসিবাদের দোসর বা সরকারের জন্য হুমকি এ ধরনের লোক বা সাংবাদিক চিহ্নিত করার ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। না হলে সরকারের পর সরকার আসবে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে দোসরও পাল্টাবে। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। এটার একটা স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক মতের বাইরে এসে পেশাদারিত্বের সঙ্গে নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন বলেন, এগুলো আমাদের খসড়া প্রস্তাব। আমরা বিষয়গুলোকে আরও স্পেসিফিক ও কার্যকরভাবে তুলে ধরতে চাই। তবে এগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ২৮ জানুয়ারি আরেকটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। তার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।