সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অনুমোদিত খসড়ায় বেশকিছু নতুন সংজ্ঞা যুক্ত এবং ৪টি অপরাধকে অজামিনযোগ্য করে হালনাগাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাতিল করা হয়েছে পূর্ববর্তী আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ করে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় বিগত হাসিনা সরকার। এবার সেই আইন বাতিল করে এরইমধ্যে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বলা হচ্ছে আগের সরকারের করা আইনের ২০, ২১, ২৪, ২৫, ২৯-সহ ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি নীতি উপদেষ্টা ফাইয়াজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, গত সরকারের আমলে বানানো সাইবার সিকিউরিটি আইনে করা মামলার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আসামি শিগগিরই খালাস পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ সব পেশাজীবীর মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দেবে নতুন অধ্যাদেশ। তবে চারটি অপরাধকে রাখা হয়েছে জামিন অযোগ্য হিসেবে।
ফাইয়াজ আহমেদ বলেন, এ অধ্যাদেশ পূর্ববর্তী নিপীড়নমূলক আইনের অপরাধবোধের দায়মুক্তি দিতে সক্ষম হবে। ভবিষ্যতে কোনো সরকার যাতে এ আইনকে কালাকানুন হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে দিকটায় নজর দেয়া হয়েছে। এটা যেন নিবর্তনমূলক না হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আইনে সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে এআই, মেশিন লার্নিং, ম্যালওয়ার এজেন্সিকে সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে এটি প্রযুক্তিনিরপেক্ষ হয়। এই আইনে রিভেঞ্জ পর্নোকে অপরাধ হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান ফয়েজ আহমেদ। এ সময় সরকারের অনুরোধে কোনো কন্টেন্ট ব্লক করা হলে তার তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
আইসিটি নীতিবিষয়ক এ উপদেষ্টা বলেন, এ আইনে বাংলাদেশের সব পেশাজীবীকে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। শব্দ চয়নে বিতর্কিত বিষয়গুলোকে সতর্কতার সঙ্গে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও কোনো সংযোজন-বিয়োজন করার প্রয়োজন হলে তা করা হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, অধ্যাদেশটি নিয়ে এখনও যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে তবে তা জানালে আইন পাসের আগে সংশোধন, পরিমার্জনের সুযোগ থাকছে। দেশে সুপ্রশস্ত সাইবার স্পেসকে সুরক্ষায় অধ্যাদেশ যাতে নিবর্তনমূলক না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখা হয়েছে। তবে সংস্কারের মানসিকতায় এটি নিয়মিত হালনাগাদ হতে পারবে।
পরিবর্তিত খসড়া অধ্যাদেশে বাতিল হওয়া ৯টি ধারার মধ্যে রয়েছে: ২০ ধারায় কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড; ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড; ২৪ ধারায় পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ; ২৫ ধারায় আক্রমণাত্মক, মিথ বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি; ২৬ ধারায় অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার ইত্যাদির দণ্ড; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি; পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার; ২৯ ধারায় মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি; ৩১ ধারায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ড; ৩২ ধারায় হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড এবং ৫৫ ধারায় মহাপরিচালকের ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত বিষয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তারপরও যদি কোনো মতামত থাকে তা আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনলাইনে যে কেউ মতামত দিতে পারবেন। মতামত পাঠাতে হবে [email protected] I [email protected] ই-মেইল ঠিকানায়।