ঢাকা সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ২০ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

বাংলা একাডেমির দাবি পোস্টারটি তাদের তৈরি না

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২৩:১২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

বাংলা একাডেমির দাবি পোস্টারটি তাদের তৈরি না

সমালোচনার মুখে অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রদর্শিত একটি পোস্টার সরিয়ে নিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, পোস্টারটি বাংলা একাডেমি তৈরি করেনি। অন্য একটি পক্ষের করা এই পোস্টার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।

‘৫২–এর চেতনা ২৪–এর প্রেরণা’ স্লোগান লেখা বইমেলা উপলক্ষে তৈরি করা এই পোস্টার টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পথে কয়েকটি জায়গায় লাগানো হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে উপস্থাপন করতে এখানে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের (১৫ মার্চ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোলা ছবি।

গতকাল শনিবার বইমেলার উদ্বোধনের পর অনলাইনে এই পোস্টারের ছবির পাশে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে শহীদ মিনারের সমাবেশের ছবি দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ।

‘৫২–এর চেতনা ২৪–এর প্রেরণা’ লেখা পোস্টারটি তৈরি করা হয় একটি সাদা কালো ছবি ব্যবহার করে। এই ছবিতে দেখা যায়, স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসে আছেন তরুণী, নারীরা। তাঁদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘মা বোনেরা অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। সেখানে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে বসে থাকা তরুণী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফেরদৌস হক লিনু।

বইমেলার এই পোস্টার নিয়ে গতকাল শনিবার রাতেই ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন কাজী ফেরদৌস হক লিনু। তাতে তিনি লেখেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এই ছবি ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ১৯৭১–এর ছবি ৫২–এর ছবি বলে উল্লেখ করছে, ধিক্কার জানাই। ছবিতে লাঠি হাতে আমি। (১৫ মার্চ) ১৯৭১–এর ছবি। তাদের ইতিহাস সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই। ৫২–তে স্বাধীনতার স্লোগান ছিল না। রাষ্ট্রভাষা মাতৃভাষা বাংলার স্লোগান ছিল।’

এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়। ফেসবুকে লিনু হক নামে পরিচিতি কাজী ফেরদৌস হক লিনুর পোস্টের নিচে এস এম শাহাদাত হোসেইন নামের একজন লেখেন, ‘ইতিহাস বিকৃতিকে ধিক্কার জানাই।’ আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম নামের আরেকজন লেখেন, ‘ইতিহাস বিকৃতি আসলে ইতিহাস অস্বীকার।’ এ নিয়ে পৃথকভাবেও অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী ফেরদৌস হক লিনু আজ রোববার বলেন, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ শহীদ মিনারে ছিল নারীদের করণীয় নিয়ে সমাবেশ। এই সমাবেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। ওই দিন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ সব দলের মানুষ সমবেত হয়েছিল শহীদ মিনারে। পরে যতটা জেনেছি ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।’

এই ছবি ’৭১ খ্রিষ্টাব্দেই পাক্ষিক ‘চিত্রালী’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল জানিয়ে কাজী ফেরদৌস হক লিনু বলেন, ‘চিত্রালীর ওই সংখ্যা আমার নিজের সংগ্রহেই ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় সতর্কতাবশত অনেক কিছু পুড়িয়ে দিয়েছিলেন আমার মা। তার মধ্যে এই ছবির সেই চিত্রালীর সংখ্যাটিও ছিল। এরপর ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে আমাকে শামসুদ্দিন আবুল কালাম এই ছবিটি উপহার দেন। তাঁর সংগ্রহে রাখা ছিল। সম্ভবত ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ওই সময় তিনি চিত্রালীতে সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। এই ছবিতে সামনে বাঁশের লাঠি হাতে বসে আছি আমি। আমার পাশে শিরিন আখতার। আরও অনেকেই ছিলেন এখানে। সেই ’৭১–এর ছবি কীভাবে ৫২–এর ভাষা আন্দোলনের ছবি হয়? আমার তখন জন্মই হয়নি।’

অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে তৈরি করা পোস্টার নিয়ে এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির পর বাংলা একাডেমির ভূমিকা কী, জানতে দুপুরে যোগাযোগ করা হয় একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা এটা বাংলা একাডেমির পোস্টার না। তবে বইমেলার পোস্টার। একাডেমির মেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এটি বানানো হয়নি। অন্য একটি পক্ষ তৈরি করেছে। আমাদের কোনোভাবে দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তবে আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গে পোস্টারটি অপসারণ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পোস্টারটি সম্ভবত মেট্রোরেলের পিলারের সঙ্গে ছিল।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পোস্টার একটি না। টিএসসির দিক থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো পথেই পোস্টার লাগানো হয়েছে একটু পরপর। পোস্টারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম আছে। তবে যতটা জানি, এটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ভুল।’

জনপ্রিয়