বিহারি নেতা ওয়াসি আলম বশীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঘটনায় চার হত্যা মামলা। যার একটির বাদী জানান, তিনি কোনো মামলা করেননি। আরেকটির বাদী শুধু পুলিশের দেওয়া কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। আসামী কে বা কারা তার জানানে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিহারি সম্প্রদায়ের নেতা সাদাকাত খান ফাক্কুসহ তাঁর সংগঠনের অন্তত ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ওই বছর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল এবং নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে করা দুই মামলার অভিযোগপত্রেও জড়ানো হয় একাধিক নেতাকে। সেসব মামলার বিচার এখনও চলছে।
এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যার দুটি মামলাতেও এসেছে তাদের নাম।
বিহারিদের সংগঠন উর্দু স্পিকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের (ইউএসপিওয়াইআরএম) সভাপতি সাদাকাত খান ফাক্কু বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে বিএনপিকর্মী হিসেবে আমাদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পরও আনা হয়েছে মিথ্যা অভিযোগ।
ওই সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় বিহারি সম্প্রদায়ের কিশোর সিয়াম সরদার হত্যার ঘটনায়। গত ১৮ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে পুলিশের গুলিতে সে মারা যায়। তার বাবা সোহাগ সরদার বাদী হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখানে ফাক্কু ছাড়াও ইউএসপিওয়াইআরএমের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ আলী বাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাকিলসহ ১২ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী সোহাগ সরদার দাবি করেন, বিএনপির লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করলেও ফাক্কু মূলত জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত। ঘটনার দিন তিনিসহ অন্যরা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর সঙ্গে লাঠিসোটা হাতে মাঠে ছিলেন।
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মো. মামুন বাদী হয়ে আদালতে ফাক্কুসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ জুলাই মিরপুরে পুলিশের গুলিতে মারা যান রিকশাচালক সেলিম আলী শেখ। বাদীর দাবি, ঘটনার দিন তিনি হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে ফাক্কুকে দেখেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সময়ে হয়রানিমূলক মামলার শিকার ফাক্কু কেন দলটির নেতাকর্মীর পক্ষে মাঠে নামবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে মামুন বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিচয় দেখে কাউকে আসামি করিনি।
এর আগে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের একই ঘটনায় করা দুটি মামলায় বলা হয়, ৭ জুলাই আসামিরা পল্লবীর আধুনিক হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে নাশকতার চেষ্টা চালায়। এজাহারে নাম না থাকলেও পরে ফাক্কু, বাবলুসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তাতে বলা হয়, অভিযুক্তরা সরকারবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ষড়যন্ত্র করছিলেন। অথচ ওই বছরের ৩ থেকে ১৯ জুলাই ফাক্কু চিকিৎসার জন্য ভারতে ছিলেন। পরে ২ ফেব্রুয়ারি একটি মামলায় ফাক্কু ও বাবলু জামিন পেয়েছেন।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করা হয়। তাতে ফাক্কুর সঙ্গে তাঁর ছেলে উর্দুভাষী যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমরান খান, বাবলুসহ অন্যদের আসামি করা হয়।
এদিকে মোহাজির রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের (এমআরডিএম) সভাপতি ওয়াসি আলম বশীর একইভাবে মামলার আসামি হয়েছেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। এর আগে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিতে অস্ত্র ও লোকজন সরবরাহ করেন। এ নিয়ে দীর্ঘ তদন্ত চলাকালে হয়রানির মুখোমুখি হন তিনি।
সেই বশীরের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুরে দোকান কর্মচারী ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা করা হয়। একটি মামলায় ২০ জুলাই রাতে বছিলা এলাকায় ট্রাকচালক মো. সুজন, অপরটিতে ১৯ জুলাই বাসচালক আক্তার হোসেনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ অক্টোবর আবদুর রশিদ নামে এক ব্যক্তিকে ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরে আদালতে মামলা করা হয়। তাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বশীরকেও আসামি করা হয়েছে।
নিহত আক্তার হোসেনের স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, আমি কোনো মামলা করিনি। কিছু লোক এসে আমাকে বলে, আপনি কি স্বামী হত্যার বিচার চান? আমি হ্যাঁ বলার পর একটি কাগজে আমাকে সই করতে বললে করে দিই।
নিহত সুজনের ভাই রফিকুল ইসলামের ঘটনাও একই রকম। তিনি বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। জামায়াতের নেতাকর্মী এসে প্রথমে আমাকে মামলা করার কথা বলে। পরে পুলিশ সব লিখে আমার সই নেয়। কে আসামি, কে নয়– আমি জানি না।
নিহত ওমর ফারুকের ভাই নাইম ইসলাম দাবি করেন, তাদের মামলায় বশীরের নাম নেই। আরেক মামলার বাদী মুহাম্মদ নাজমুল হোসেন নাহিদকে ফোন করে সাড়া মেলেনি।