স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতে বিগত সরকারগুলো ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি জাতিকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদের কাজে লাগাতে পারেনি। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে যথাযথ সংস্কার এনে শিক্ষা জাতীয়করণ করা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংগঠনটির ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংস্কার করে জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষকরা মানবেতর জীবন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পাশাপাশি আত্মসম্মান ফিরে পাবেন উল্লেখ করে আবু ইউসুফ আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশের অগ্রগতিতেও এর প্রভাব পড়বে। যে কারণে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।
ইউনেস্কোর পরামর্শ মতো শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নত দেশে রূপান্তর সম্ভব নয়। স্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার মতো পরিবেশ দেওয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন, শিক্ষকদের উপযুক্তভাবে প্রশিক্ষিত করে তুলতেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ফলে দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, দেশের প্রতিটি পরিবারেই শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষা জাতীয়করণ হলে পারিবারিক পর্যায়ে খরচ কমে প্রত্যেক পরিবারই উপকৃত হবে। অন্যদিকে শিক্ষকদের বেতনভাতাদি বৃদ্ধি পেলে শিক্ষকরাও আন্তরিক হয়ে ভালোভাবে পাঠদান করাবে। ফলে প্রাইভেট-টিউশনির প্রয়োজন হবে না। উন্নত বিশ্বের মতো ক্লাসরুম হবে শিক্ষার্থীদের সবকিছুর সমাধানের জায়গা। এতে উপকৃত হবে গোটা দেশ।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, কর্মীদের অন্যায়-অপকর্মে জড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও নেতাকর্মীরা যদি সৎ, দেশপ্রেম নিয়ে সামনে চলেন তখন পুরো জাতি সে পথে পরিচালিত হবে। কিন্তু অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ণরা দায়িত্বে থাকলে দেশও সেই পথে হাঁটবে। আর সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে চলতে পারলে জাপান, নরওয়ে, সুইডেন কিংবা ডেনমার্কের মত বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর কড়া সমালোচনা করে আরও বলেন, এক এক করে তিনটি দল (আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি) ও মঈন-ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত সরকার গত ৫৪ বৎসর রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছে। কিন্তু তাদের কেউই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। বরং দুর্নীতি আরও জেঁকে বসেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, কোনো দলই ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজেদের ব্যর্থতা যাচাই-বাছাই করে না। এমন কি সফলতা অর্জনের জন্য কোনো পরিকল্পনাও করে না। এদের সবার ভাবনা দেশি-বিদেশি শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়া। এ ধরণের আত্মঘাতী মানসিকতা পরিহার না করা গেলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো না। আর লুটপাটের রাজনীতি চলতে থাকলে অচিরেই হয়তো বাংলাদেশকে সিকিমের মত ভাগ্য বরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র মুহাম্মাদ আবদুর রহীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন মুসলিম লীগের সভাপতি জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ডা. ওয়ালিউর রহমান, বিআইআইটি'র মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ, নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা ওবায়দুল হক, হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব নরেন্দ্রনাথ মজুমদার, ড. জিন বোধি ভিক্ষু, জাতীয় কবিতা মঞ্চের সভাপতি কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, ইঞ্জিনিয়ার খোয়াই চিং মং শাক, সানজিদা আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ।