ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

বাংলা একাডেমিতে ১৭৫ নিয়োগ জালিয়াতির খোঁজে দুদকের অভিযান

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

বাংলা একাডেমিতে ১৭৫ নিয়োগ জালিয়াতির খোঁজে দুদকের অভিযান

বাংলা একাডেমিতে ১৭৫ জনের নিয়োগে জালিয়াতি ও বিভিন্ন অনিয়মের খোঁজে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুদকের একজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। [inside-ad]

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, বাংলা একাডেমিতে ১৭৫ জন নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন মহাপরিচালক নুরুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টরা চাকরির আবেদন ফরম থেকে শুরু করে পদে পদে দুর্নীতি করেছেন। এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ১০ লাখ টাকা করে ঘুস নেন।

দুদকের অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলা একাডেমির শূন্যপদ পূরণের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শূন্য পদের জন্য (১৮০টি) যথাক্রমে ১০০, ২০০, ৪০০ ও ৬০০ টাকা আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে বলা হয়। ৫০ হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন।

প্রায় দুই কোটি টাকা বাংলা একাডেমির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, পরীক্ষা কেন্দ্র ভাড়া, পরীক্ষকদের সম্মানী প্রদান তথা আনুষঙ্গিক ব্যয়ের পরও অর্ধকোটি টাকা থেকে যায়। মহাপরিচালক ও নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা নিজেদের পারিশ্রমিক হিসেবে তা ভাগাভাগি করে নেন।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদকের অভিযোগে বলা হয়, চার হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়। কিন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ডাকা হয় মাত্র ৫০০ জনকে। তাদের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে গোপনে ১৭৫ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১৩৩ জন চাকরিতে যোগ দেন। বাকিরা চাহিদা মতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় যোগ দিতে পারেননি। যোগদানকারী ১৩৩ জনের মধ্যে বাংলা একাডেমিতে ইতোপূর্বে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত ৮৪ জনের মধ্যে ৪৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।[inside-ad-2]

এতে আরও বলা হয়, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হচ্ছেন বাংলা একাডেমিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পোষ্য (১৫ জন), কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের আত্মীয় যেমন- স্ত্রী, ভাই, বোন, ভাগ্নে, ভাগ্নি, ভাতিজা, ভাতিজি (৩০ জন) নিয়োগ দাতা কমিটির কর্মকর্তা ও কার্যনিবাহী পরিষদের সদস্যদের সুপারিশে নিয়োগ দেওয়া হয় ৩৪ জন। বয়স সীমা লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়া হয় ৪২ জনকে। যেখানে বাংলা একাডেমির নিয়োগবিধি এবং প্রবিধানমালার শর্ত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়।

এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১০ লাখ টাকা নিয়োগের জন্য দাম ওঠে। অন্য প্রার্থীদের জন্য বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। আর্থিক সুবিধা, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়, বাংলা একাডেমির নিয়োগবিধি, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং প্রবিধানমালার শর্ত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়।

অভিযোগে দাবি করা হয়, পুরো অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন প্রাক্তন মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা, ডা. খোন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম (তৎকালীন পরিচালক, প্রশাসন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগ, ড. মো. হাসান কবীর (সিনিয়র পরিচালক ও সচিবের অবর্তমানে চলতি দায়িত্ব পালনকারী), মহাপরিচালকের পিএ আবুল কালাম আজাদ এবং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

এছাড়া সাবেক পিএ বর্তমানে সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ তার ভাগ্নে রফিকুল ইসলামকে সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সময় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমিতে তৃতীয় শ্রেণির পদে চাকরি দিতে সমর্থ হন। এবার তিনি তার ছেলে রকিবুল ইসলাম এবং তার ভাতিজা ইব্রাহিম হোসেনকে তৃতীয় শ্রেণি পদে চাকরি দিতে সমর্থ হন এবং ঊর্ধ্বতনদের ইচ্ছা মোতাবেক অবৈধ নিয়োগে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

অভিযোগে জানানো হয়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা দৈনিক মজুরিভিত্তিক জনবল নিয়োগের দীর্ঘকাল ধরে বাংলা একাডেমিতে একটি কুপ্রথা চালু আছে। রাজনৈতিক প্রভাব, কর্মকর্তাদের খেয়ালখুশি এবং কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে এভাবে লোক নিয়োগ করা হয়। প্রথমে চার মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর তাদের বারবার সময়সীমা বাড়ানো হয়।

এভাবে দেখা যায় কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী টানা ১০ বছর পর্যন্ত বাংলা একাডেমিতে চাকরি করে আসছেন। তাদের বেতন দেওয়া হয় একুশে বইমেলার স্টল ভাড়া আয়, বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বই বিক্রির আয়, প্রেস থেকে আয়, ব্যাংক ভাড়া, ক্যান্টিন ভাড়া, এফডিআর, মিলনায়তন ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ভাড়ার আয় থেকে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা একাডেমির নিজস্ব আয় থেকে দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে বাংলা একাডেমির একজন সচিব এভাবে নিয়োগ ও বেতন নিয়ে আপত্তি তোলায় তাকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তদবির করে অন্যত্র বদলি করা হয়।

অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তারা জানান, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণপূর্বক কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

জনপ্রিয়