
ত্রয়োদশ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) নয়, ব্যালট পেপারের মাধ্যমে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এই মেশিনগুলো ব্যবহার করা হবে কি না সেটিও স্পষ্ট নয়। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দেড় লাখ ইভিএমের দায়িত্ব এখন নিতে চায় না কেউই।
নয় মাস আগে এই ইভিএম প্রকল্প শেষ হলেও এখনও বুঝে নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রকল্প পরিচালক বলছেন, প্রকল্পের আওতায় কেনা মালামাল বুঝিয়ে দিলেও নিচ্ছে না কমিশন। অন্যদিকে ইসি বলছে, সোর্সকোড বা কারিগরি স্বত্ব, ডিজাইন, ডেটাবেজ বুঝিয়ে দিলেই ইভিএম নেবে তারা। এমন সংকটে আটকে আছে ইভিএম হস্তান্তর প্রক্রিয়াও।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনে নির্বাচন কমিশন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এক বছর বেড়ে গত বছর জুনে শেষ হয়। প্রকল্পের আওতায় কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে এখনও প্রায় ১ হাজার ২০০টির খোঁজ নেই। অন্যদিকে, ১ লাখের বেশি ইভিএম নষ্ট।
ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কমিশনের পক্ষে এখন পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে ইভিএম টেকওভার করা হয়নি। কবে নাগাদ ইভিএম হস্তান্তর হবে তা নির্দিষ্ট করে কমিশন ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউই বলতে পারেনি। যেন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় ইভিএমগুলো এখন কমিশনের গলার কাঁটা হয়ে গেছে।
ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যাবতীয় সকল কাজ শেষ। যেভাবে চাওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী কাগজপত্র ও ইভিএম প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’
কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘যিনি এটা (ইভিএম) নেবেন, তিনি যদি মনে করেন সে আরেকটু বিস্তারিত জানবেন, সেই প্রাধিকার তাঁর রয়েছে। এর জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। সেই সময়টা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেওয়া উচিত।’
প্রকল্প ডিজাইনে দুর্বলতা ছিল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে কমিশন বলছে, ইভিএমের কারিগরি বিষয় বুঝে না পেয়ে হস্তান্তরে দেরি হচ্ছে।
আখতার আহমেদ বলেন, ‘সোর্সকোড যদি আমি না জানি, মেশিনের কম্পাটিবিলিটি যদি আমি না জানি, তাহলে ভবিষ্যতে যদি এটা ব্যবহারের কথা আসে তখন কী করা হবে। ডিসপোজালের ক্ষেত্রেও এটির প্রয়োজনীয়তা আছে।’
তবে এনিয়ে কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘সোর্স কোড বোঝার বিষয়, সেটা প্রকল্প ডিজাইনের বাইরে। প্রকল্পে এমন ডিজাইন নেই। প্রকল্প যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী সব কাজ শেষ হয়েছে।’
এদিকে, প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছে কমিশন। ইভিএম সংরক্ষণ বাবদ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছে দেনাও বাড়ছে কমিশনের।