
কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু করেছে কর্মীরা।
এমআরটি পুলিশের সদস্যদের মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা। এতে সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে একক যাত্রার টিকেট দেওয়া বন্ধ থাকে, কেবল এমআরটি বা র্যাপিড পাস আছে- এমন যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারছিলেন। এতে মেট্রোরেল চলাচল করলেও ভোগান্তিতে পড়েন অন্য যাত্রীরা। তারপর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু করে কর্মীরা।
মেট্রোরেলে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেট রয়েছে। একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস বা র্যাপিড পাস, অপরটি একক যাত্রার টিকেট। এমআরটি পাস কিনে শুধু রিচার্জ করে যাত্রীরা ট্রেনে চড়তে পারেন। যতক্ষণ কার্ডে টাকা থাকে ততক্ষণ ট্রেনে চড়া যায়। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা রিচার্জের সুযোগ আছে।
আর একক যাত্রার টিকেট কেটে গন্তব্যে যাওয়া যায়। এই টিকেট মেশিনে ঢুকিয়ে বের হতে হয়। টিকেট মেশিনে দিলেই শুধু স্টেশন থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকে।
এর আগে, রোববার (১৬ মার্চ) বিকেলে সচিবালয় স্টেশনে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা মেট্রোরেল কর্মকর্তাদের মারধর করেছে অভিযোগ তুলে গভীররাতে এ কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
সোমবার সকাল ৭টায় ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্রোরেল স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি এবং চলন্ত সিঁড়ির কলাপসিবল গেইট বন্ধ। এতে একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সাময়িকভাবে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ আছে। যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখিত।
মেট্রোরেল কর্মীরা অভিযোগ করছেন, রোববার সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের চারজন কর্মীকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে রোববার মধ্যরাতে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ'র ব্যানারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, রোববার সোয়া ৫টার দিকে দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সাদা পোশাকে বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। ওই সময় তারা ইএফও (অ্যাকসেস ফেয়ার কালেকশন) অফিসের পাশে অবস্থিত সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরা ছিলেন না, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সেখানে দায়িত্বরত সিআরএ (কাস্টমার রিলেশন অ্যাসিস্টেন্ট) সুইং গেইট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান।
এতে পুলিশের কর্মকর্তারা উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান। পরে ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেইট ব্যবহার করে সুইং গেইট না লাগিয়ে চলে যান৷ এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও আগের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছুক্ষণ পর পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএর সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত এক টিএমও’র (টিকেট মেশিন অপারেটর) শার্টের কলার ধরে এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।
এসময় গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। তখন স্টেশনের স্টাফ ও যাত্রীরা এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আহত সিআরএকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি মেট্রোরেলের কর্মপরিবেশের জন্য হুমকি।
ছয়টি দাবি তুলে ধরেছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা, যার মধ্যে রয়েছে-
আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে। বাকি পুলিশ সদস্যদের শান্তি দিতে হবে, তাদেরকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
এমআরটি পুলিশ বিলুপ্ত করতে হবে।
স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ, টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্যান্য কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ছাড়া এবং অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে মিনিস্ট্রি একটি কমিটি করেছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এরইমধ্যে এমআরটি পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা কর্মবিরতি যারা করছে তাদের সঙ্গে আমার একটু আগেই কথা হয়েছে। তারা কাজে ফিরবেন।
এমআরটি পুলিশের ডিআইজি সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এমআরটি পুলিশের একজন ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে। একজন এসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারা যেহেতু অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব।