
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত ঝালকাঠির সেলিম তালুকদারের মেয়েশিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।
সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার সেলিম তালুকদারের শ্বশুরবাড়িতে শিশুকন্যাকে দেখতে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় মেয়ের নামও রাখেন জামায়াত আমির।
গত বছরের ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়ে ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম তালুকদার। ১৫ দিন ঢাকাতেই একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩১ জুলাই রাতে তিনি মারা যান। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন দ্বিতীয়।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। নিহত সেলিমের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের তৈরি পোশাকের একটি কারখানায় সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন।
মারা যাওয়ার এক বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমানের মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন সেলিম। ৮ মার্চ সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঝালকাঠির একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাঁর স্ত্রী একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
সেলিম তালুকদারের মেয়েকে দেখতে এসে তার নাম রাখার পাশাপাশি তার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। জামায়াত আমির বলেন, ‘এই শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে নাম রাখা হয়েছিল রোজা।
আমরা ওর নাম দিচ্ছি সাইমা সেলিম। এই শিশুর বড় হওয়া পর্যন্ত আমরা তার সাথে থাকব। সে আমাদের পরিবারের সদস্য, আমাদের সবার কাছে আমানত। এই শিশুর লেখাপড়া, চিকিৎসাসহ তার বিবাহের দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামের।’
এর আগে আজ দুপুরে ঝালকাঠি প্রেসক্লাব চত্বরে জেলা জামায়াতে ইসলাম আয়োজিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আমির শফিকুর রহমান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে ঝালকাঠি পৌর মিনি স্টেডিয়ামে এসে নামেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চেয়ে পথসভায় জামায়াত আমির বলেন, ‘খুনিদের দ্রুত বিচার হোক, ন্যায় বিচার হোক। বিচার হলেই শহীদদের পরিবার ও দেশবাসী শান্তি পাবে।
সরকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেটা দেওয়া হলে পরিবারের জন্য উপকার হবে। এ ছাড়া আহত যাঁরা আছেন, তাঁদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সংগঠন থেকে তৌফিক অনুয়ায়ী তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘আন্দোলনে অনেকে আহত হয়েছেন, অনেকে জীবন হারিয়েছেন। অনেকে হাত হারিয়েছেন, পা হারিয়েছেন। চোখ হারিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কেউবা বাড়ির বিছানায় সজ্ঞাহীন অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। এই আন্দোলনে যাঁরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, সেই ছাত্র–জনতার প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তাআলা তাঁদের সবাইকে সুস্থ–ভালো রাখুক।
এই ঘটনায় যারা জড়িত, সেই জালিমদের আমরা বিচার নিশ্চিত দেখতে চাই। এই খুনিদের যথাযথ বিচার বাংলাদেশের পেনাল কোড অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। গড়িমসি করে টাইম ক্ষেপণ করা নয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্দেশকারী পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী সকলকে আমরা শাস্তির আওতায় দেখতে চাই।’
মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই মিলেমিশে একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়ব। এই বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মানুষ মানুষের দুঃখে সাড়া দেবে। এই বাংলাদেশে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করবে। কোরআনের ভিত্তিতে এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি।’
পথসভায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম (মাসুদ), মোয়াজ্জেম হোসাইন (হেলাল)। এ সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।