ঢাকা সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫ , ২৩ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

শোলাকিয়ার ইমাম মাসউদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ১১:২১, ৬ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

শোলাকিয়ার ইমাম মাসউদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রধান ইমাম হিসেবে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। গত ৪ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ওয়াকফ দলিলের বিরোধী ছিল এবং এটি আইনবিরুদ্ধ।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াকফ দলিলে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম নিয়োগের দায়িত্ব মোতয়াল্লিকে ওয়াকফের দলিল নিজেই প্রধান ইমাম নিয়োগের ক্ষমতা দিয়েছে। তাই তিনি ইমাম নিয়োগ করেছিলেন এবং ওয়াকফ প্রশাসকের দ্বারা চূড়ান্ত হিসেবে এটিকে সমর্থন করা হয়েছিল।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ান মোহাম্মদ দাদ খান শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ভূসম্পত্তি ওয়াকফ করে দেন। ওয়াকফ দলিলে তিনি বলেন, “আমার জীবিতকালের মধ্যে উক্ত ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মোতোয়ালি আমি। আমার অভাব হলে ওই সময়ে আমার পুত্রদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র মোতোয়ালি নিযুক্ত হবে। এবং তার অভাব হলে তখন পুত্রদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র মোতোয়ালি নিযুক্ত হবে। এবং এভাবে ক্রমিক জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং তার অভাবে জ্যেষ্ঠ পুত্র পুরুষানুক্রমে মোতোয়ালি নিযুক্ত হবে। ওয়াকফ দলিলে বলা ছিল ঈদগাহে বছরে দুই দিন ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। তাতে মোতোয়ালি ইমাম নিযুক্ত করবেন।”

দলিল অনুসারে, ইমামের নিয়োগ পদ্ধতিতে কোনো বাহ্যিক হস্তক্ষেপ অনুমোদিত ছিল না। কিন্তু ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন, যা ওয়াকফ দলিলের পরিপন্থী ছিল।

পরে জেলা প্রশাসক কর্তৃক নিযুক্ত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম নিযুক্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে হাইকোর্টে রিট করেন আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লা।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, রিটকারীকে (আবুল খায়ের মো. ছাইফুল্লাহ) ওয়াকফ দলিল এবং অফিসিয়াল পদ্ধতি উভয় চেতনা অনুসরণ করে স্থায়ীভাবে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রধান ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাই মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে প্রধান ইমাম পদে নিয়োগ দেওয়াটা শুধু ওয়াকফ দলিলের চেতনার পরিপন্থী নয়, বরং আইনের পরিধিরও বাইরের ছিল।

হাইকোর্টের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি এ. কে. এম. রবিউল হাসান রিটের শুনানি শেষে রুল মঞ্জুর করে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেন।

আদালত বলেন, "মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নিয়োগ আইন এবং ন্যায্যতার পরিপন্থী ছিল এবং এটি অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।"

আইনজীবী মো. পারভেজ হোসেন, যিনি রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন, তিনি বলেন, "ওয়াকফ দলিলে মোতয়াল্লিকে ইমাম নিয়োগের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু জেলা প্রশাসক সেই ক্ষমতা উপেক্ষা করে ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করেন।"

এ ছাড়া, ওয়াকফ অধ্যাদেশের ৭০ ধারায় বলা হয়েছে যে প্রশাসক শুধুমাত্র যখন কোনো ইমাম অক্ষম বা অযোগ্য হন, তখনই ইমাম নিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু আবুল খায়ের মো. ছাইফুল্লাহর ক্ষেত্রে কোনো অক্ষমতা বা অযোগ্যতা ছিল না, তাই তার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আইনগতভাবে ভুল ছিল।

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল এবং তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় করা একটি হত্যা মামলায় ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে আসামি করা হয়। তখন থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।

জনপ্রিয়