
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে দেশের সব শ্রেণি-পেশার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে জরিপ চালানো হবে। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মতামত জানাতে পারবেন আগ্রহীরা।
সোমবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে এবি পার্টির সঙ্গে হওয়া সংলাপে এ কথা জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বৈঠকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলটির ১৩ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ গত ২০ মার্চ শুরু হয়। ঈদের ছুটির কারণে বন্ধ থাকলেও সোমবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে।
সংলাপে অংশ নিয়ে এবি পার্টি সংস্কার প্রশ্নে তাদের দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেছে।
তারা জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশন উত্থাপিত ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১০৮টির সঙ্গে একমত তারা। ৩২টি প্রস্তাবে তাদের দ্বিমত রয়েছে। আর ২৬টি প্রস্তাবে তারা আংশিক একমত।
এদিকে বৈঠকের শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য জাতীয়ভাবে হতে হবে।
শুধু সমাজের বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর, বিশেষ কোনো অংশের প্রতিনিধিত্ব না করে, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন, এর বাইরেও যারা আছেন তাদের মতামত আমরা নিতে চাই। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা হচ্ছে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। যাতে করে সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে মনোনিবেশ করতে পারি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ২৯ রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।
আশা করি, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ রাজনৈতিক দল ও জোটগতভাবে পথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হবে। এরপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য দেখব, বাইরেও কিছু কিছু বিষয়ে ভিন্ন মত আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। তা নিয়ে মের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা করতে পারব বলে আশা করছি। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জুলাই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করাই কমিশনের লক্ষ্য।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবনা আমাদের পছন্দ হয়েছে। যেসব বিষয়ে দ্বিমত এবং আংশিকভাবে ঐকমত্য এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংকট নিরসনে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরেও পর্দার অন্তরালে আলোচনা করতে হবে। অনেক বিষয়ে আমরা হয়তো একমত হইনি। কিন্তু ভবিষ্যতে সংলাপের মাধ্যমে একমত হবো। অথবা আমাদের মতামতের ভিত্তিতে আপনাদের মতামত প্রত্যাহার করে, একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাব। আমাদের দলের অবস্থান ফ্ল্যাক্সিবল। আমাদের মতামতের ওপরই যে আমরা স্থির থাকব তা না, যৌক্তিকতার আলোকে যেকোনো আলোচনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এটা আমাদের নীতিগত অবস্থান।’
তিনি আরো বলেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বাইরেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে তৎপরতা চালাতে হবে, কারণ সবাইকে নিয়ে একমতে আসার মতো কঠিন কাজ কিছু হতে পারে না। তার পরেও আমরা আশাবাদী জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সফল হবে, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। সঠিক দিক-নির্দেশনায় চলবে।
উল্লেখ্য, সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত পাঁচটি কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চায় কমিশন। এতে ২৯টি দল তাদের মতামত দিয়েছে। মতামত দেওয়া দলগুলোর সঙ্গে গত ২০ মার্চ থেকে প্রথম দফার সংলাপ শুরু হয়েছে।
এরআগে এলডিপি, খেলাফত মজলিস, লেবার পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে দলগুলোর জমা দেওয়া মতামত নিয়ে আলোচনা করেছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে একমত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে সই হবে জুলাই সনদ।