
ইলিশকে ‘গ্লোবাল ফিশ’ উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ইলিশের ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো করতে পারলে বিশ্বের কাছে তা পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই, ইলিশকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, ইলিশ বিশ্বের মধ্যে একটা সম্পদ, যা বাংলাদেশে আছে। যে ১১টা দেশে ইলিশ পাওয়া যায়, তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনার ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন সাফল্য নিরূপণ, জাটকা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এ সব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এখনই আমরা ইলিশের কৃত্রিম প্রজননে যেতে চাই না। কৃত্রিম প্রজনন আমাদের প্রাণিসম্পদের খুব বেশি উপকার করেনি। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ইলিশ প্রকৃতি থেকে আসা একটা মাছ। এটা প্রাকৃতিকই রাখা ভালো। একই সঙ্গে জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে, তখন দামটা যেন ঠিক থাকে, তা আমাদের দেখতে হবে।
পরিবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততার প্রভাব তো আছেই, সেই সঙ্গে বৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার সঙ্গে ইলিশের ডিম ছাড়ার একটা সম্পর্ক আছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা কী করতে পারি, তা গবেষকদের দেখতে হবে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা যদি যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে আর ৯৫ ভাগ জেলেরা যদি ইলিশ ধরা বন্ধের সময় তারা না ধরেন, তাহলে কেন আমরা বাকি কাজটা করতে পারবো না! জেলেরা যেখানে মাছ ধরতে যান, সেখানে দস্যুরা আক্রমণ করে। তাদের চিহ্নিত করে ধরতে হবে। আমরা যে মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকি, তা যেন জেলেরাই পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ইলিশের অর্থনৈতিক মূল্যের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মৌসুমে দেশ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ইলিশ রফতানি করা সম্ভব। আমরাও ইলিশ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারি। তবে আগে আমাদের দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়াতে হবে।
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না-খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, যারা ইলিশ খান, তাদের বুঝতে হবে, ইলিশ আর জাটকা এক নয়। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। একদিন পরেই পহেলা বৈশাখ, তখন যারা পান্তা-ইলিশ খাবেন, তারা মূলত জাটকা খাবেন।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন। গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিএফআরআই-এর গবেষক, মৎস্যজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন প্রফেসর ড. ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী।