দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় নীলফামারীতে দুর্নীতি অনেক কম। কিন্তু আমি ঢাকার অবস্থা যেটা দেখি, সেটা বেশ বেশি। যেখানে প্রকোপ কম সেটাকে একটা মডেল জেলা হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব। আমি আশা করবো, একটা সময় আপনারা নিজেরাই ঘোষণা করবেন, নীলফামারী হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা।
রোববার (২০ এপ্রিল) নীলফামারীর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি মনে করি, সবার আগে দুর্নীতিমুক্ত জেলার নামের তালিকায় নীলফামারী জেলার নাম আসবে। আমরা যে দুর্নীতি করি, সেটাও আপনারা আমাদের দেখিয়ে দেবেন এবং আমরা চেষ্টা করবো যতটা সম্ভব এই দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন যদি দুর্নীতি করে, তখন তো আর বাকিদের বলার কিছু থাকে না।
‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রংপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানি শেষে দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের মধ্যে এখন যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা, আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি কিনা! আমাদের দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের যদি টাকা-পয়সা থাকে, যদি আমাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে পারে, তাহলে খুব সন্তুষ্ট থাকি তাদের ওপরে। আমরা যদি এই দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের একটু ঘৃণা করতে না পারি, তাহলে কিন্তু এই সংকটটা খুব সহজে যাবে না। যেটা আপনারাই শুরু করুন যে ঠিক আছে, আমরা দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলবো।
দুর্নীতি রুখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহেলা রয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের কাজগুলি কিন্তু ব্যক্তিগত কাজ না, প্রাতিষ্ঠানিক কাজ। প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করে তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেনো এত অভিযোগ আসবে! তারপরও আইনগত কিছু বিষয় আছে যেগুলো অনেক সময় আদালতে চলে যায়।
এটা ছাড়া আমি তো মনে করি, আজকে যে অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে, এর দুয়েকটা ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ এখানে আসার কোনো কারণ ছিলো না।
আমি বিশ্বাস করি, আমরা কর্মকর্তাবৃন্দ যারা ‘সেবাদাতা’ বলে নিজেদের দাবি করি, আসলে জনগণের অর্থে আমাদের বেতন হয়, আমরা বড় চেয়ারে বসি, ভালো পোশাক পরি। আমাদের সেই কমিটমেন্ট থাকা দরকার। আমরা যেন তাদের (জনগণের) ঋণ শোধ করতে পারি।
ভবিষ্যতে দুর্নীতি বন্ধ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মনে করে, আমাদের যে কর্মপদ্ধতি, এটার মধ্যে খানিকটা ভ্রান্তি আছে। সেটা হচ্ছে, আমরা যে সময় ব্যয় করি, মোট সময়টা পুরোনো দুর্নীতিকে কীভাবে নিরসন করা যায়, তার পেছনে। আসলে আমাদের বড় কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয় সেটা রোধ করা। কোথায় দুর্নীতি হয় আমি, আপনি আমরা সবাই জানি। যদি জেনেই থাকি তাহলে ভবিষ্যতের দুর্নীতি ঠেকাবার জন্য এখন থেকেই যদি আমরা সতর্ক থাকি তাহলে কি দুর্নীতি দূর হবে না!
সবশেষে, যুবশক্তি দেশকে রক্ষা করবে মন্তব্য করে তিনি দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভালো দিক যেটা হচ্ছে, আমাদের এই যে যুবশক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী। যুবশক্তি এটা প্রমাণ করেছে, এই যুবশক্তি দেশ স্বাধীন করেছে। তারা আবার নিজেরা যদি চাঁদাবাজির মধ্যে ঢুকে যায় তাহলে খুব মুশকিল। তারা যদি সতর্ক থাকে, বাংলাদেশে তারাই হবে শ্রেষ্ঠ প্রহরী। বাংলাদেশকে তারাই রক্ষা করবে আমাদের।
গণশুনানিতে ৮১টি অভিযোগের মধ্যে দুটি আদালতে রয়েছে, কয়েকটি অপ্রাসাঙ্গিক ও ৫৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউল গনি ওসমানীকে পঞ্চপুকুর শাহ পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়মের অভিযোগে তাকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী বোরহান উদ্দিন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ইএফটি ও বিভিন্ন হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তাকেও অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এতে নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান।
এ সময় জেলার বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তি ও অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করা হয়।
