ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ , ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

তাওবার উপকারিতা

জাতীয়

শামসুদ্দীন সাদী, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ১৮:২২, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

তাওবার উপকারিতা

মানুষ মাত্রই ভুল। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু ভুল হয়ে যাওয়ার পর ভুল স্বীকার করা এবং সেই ভুল থেকে ফিরে আসা আদর্শ মানুষের কাজ। ভুল অস্বীকার করা এবং ভুলের ওপর অবিচল থাকা শয়তানের কাজ। সৃষ্টির পর হজরত আদম ও হজরত হাওওয়া (আ.)-কে জান্নাতে বাসস্থান দেওয়া হয়। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় সেখানে তাঁদের থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি কাজ সংঘটিত হয়ে যায়। যার কারণে জান্নাতের সুরম্য বাগিছা থেকে তাদেরকে দুনিয়ার জগতে পাঠানো হয়। তাঁরা নিজের ভুল বুঝতে পারেন। আল্লাহর কাছে তাওবা করেন। আল্লাহ তাঁদের তাওবা কবুল করেন। একটি ভুল ও ভুলের পরে অনুশোচনা ও তাওবার মাধ্যমেই পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা হয়।

অপরদিকে শয়তান ভুল করেছে। আল্লাহ শয়তানকে আদেশ করেছিলেন হজরত আদমকে সিজদা কর। শয়তান অহংকারবশত আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করল। কিন্তু সেই ভুলের কারণে শয়তান আজও অনুতপ্ত হয়নি এবং তাওবা করেনি। যার কারণে সে বিতাড়িত। শয়তান নিজে বিতাড়িত হয়ে মানুষকে জাহান্নামি বানানোর মিশনে নামে। এর জন্য সে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনুমতিও লাভ করে। কোরআন মাজিদে তার বিবরণ এভাবে এসেছে : শয়তান বলল, তুমি যেহেতু আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, তাই আমি শপথ করছি যে, আমি তাদের (অর্থাৎ মানুষের) জন্য তোমার সরল পথে ওঁৎ পেতে বসে থাকব। তারপর আমি (চারদিক থেকে) তাদের উপর হামলা করব, তাদের সম্মুখ থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকেও। আর তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না। (সুরা আরাফ: ১৬-১৭)

এই দুই আয়াতে শয়তান যে চতুর্মুখী আক্রমণ করে মানুষকে পাপের পথে নিয়ে যাবে এবং মানুষকে জাহান্নামী বানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে তার বর্ণনা রয়েছে। এই দুই আয়াত আমাদেরকে শয়তানের আক্রমণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার শিক্ষা দেয়।

শয়তানের এমন হুংকারে আমাদের ভীত হওয়ার কারণ নেই। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে লক্ষ্য করে বলেন : জেনে রাখিস, যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোর কোনও ক্ষমতা চলবে না। তবে যারা তোর অনুগামী হবে সেই বিভ্রান্তদের কথা ভিন্ন। (সুরা আল হিজর: ৪২)

কোরআনের ভাষ্য থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, শয়তান প্রতিনিয়ত প্রতিমুহূর্তে মানুষকে বিভ্রান্ত করার এবং পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছু মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বিভ্রান্ত হবে এবং পাপের সাগরে ডুবে যাবে। কিন্তু আল্লাহ রাহমানুর রহিম। তিনি দয়ার সাগর। তাঁর দয়ার সামনে আমাদের পাপ-পঙ্কিলতা খড়কুটোর মতো। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পাপে জড়িয়ে যাওয়ার পর যদি আমাদের হুঁশ ফিরে আসে এবং অনুতপ্ত হই, আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তাওবা করি তাহলে আমাদের সকল পাপ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাপ থেকে তাওবাকারী এমন ব্যক্তির মতো যার কোনো গুনাহ নাই। (ইবনে মাজাহ: ৪২৫০)

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতেও বারবার বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাওবা কবুলকারী। শয়তানের ধোঁকায় পাপে জড়ালেও আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হওয়া নিষেধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন : হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল। (সুরা যুমার: ৫৩)

গুনাহর বোঝা যতই ভারী হোক, তাওবার আগুনে তা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাওবার দ্বারা গুনাহসমূহ ধুয়েমুছে সাফ তো হয়-ই, উপরন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা হজরত হুদ (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করেন। হজরত হুদ (আ.) স্বীয় সম্প্রদায়কে মূর্তিপূজা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন: হে আমার সম্প্রদায়! নিজেদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই দিকে রুজু হও। তিনি তোমাদের প্রতি আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের বর্তমান শক্তির সাথে বাড়তি আরও শক্তি যোগাবেন। সুতরাং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সুরা হুদ: ৫২) অনুরূপভাবে হজরত নুহ (আ.) তার সম্প্রদায়কে তাওবার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন : তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান আর তোমাদের জন্য নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দিবেন। (সুরা নুহ: ১০-১২)

আল্লাহ কত বড় দয়াবান, আমরা নিজেদের পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি, তিনি পাপসমূহ মোচন তো করেন, সাথে সাথে পুরস্কার হিসেবে বৃষ্টিপাত, ধনসম্পদ, নদী-নালা ও উদ্যান দান করেন। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বেশি বেশি তাওবা করার তাওফিক দান করুন।

 

জনপ্রিয়