ঢাকা রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

শিশুশিক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা

মতামত

মো. সিদ্দিকুর রহমান

প্রকাশিত: ০০:২০, ১০ জুলাই ২০২৪

সর্বশেষ

শিশুশিক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিশুকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের মাধ্যমে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যেনো একদিন তারা চাঁদও জয় করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের একদিন চাঁদে যেতে হবে। আমাদের চাঁদকে জয় করতে হবে। আমাদের সন্তানদের শৈশব থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে জাতীয় প্রাথমিক সপ্তাহ ২০২৪ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি চান বাংলাদেশ ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে উঠবে। সেখানে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নর, স্মার্ট ইকোনমি এবং সোসাইটিও স্মার্ট হবে। আজকের শিশু আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেবে।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেনো একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের শিশুকে শিক্ষা-দীক্ষায় সাংস্কৃতিক চর্চা খেলাধুলা সবদিক থেকেই উপযুক্ত নাগরিক হিসেবেই তাদের গড়ে তুলতে চাই। আর তা করার জন্য যা যা করণীয় অবশ্যই আমরা তা করবো। 
শেখ হাসিনা বলেন, তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশের উন্নয়নে তাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমি চাই, আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক, তারা এ দেশের কর্ণধার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই শিশুদের মধ্যে কেউ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবেন, বড় বড় সংস্থায় চাকরি করবে, বৈজ্ঞানিক হবে। আমরা একটি সুষম জনকল্যাণমুখী সর্বজনীন মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে চাই। যেখানে শুধু কেরানি পড়া পড়ে নয়। এই ছোট্ট শিশুদের ভেতরে যে মেধা ও মননশীলতা আছে সেগুলো আমাদের বের করে আনতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে।

তাদের ভেতরে যে একটা কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে, সেটাই যাতে বিকশিত হতে পারে, সেই সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। সরকারপ্রধান আরো বলেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা শিক্ষা কারিকুলাম আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানের পথে নিয়ে আসছি। অনেক স্কুল হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি স্কুলে আমরা কম্পিউটার ল্যাব করে দেবো এবং যা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকেই শুরু হবে। আর আমরা প্রাক-প্রাথমিক চালু করেছি, যেটা এখন দুই বছরের জন্য করতে চাচ্ছি। সেখানে পড়াশোনা নয় বাচ্চারা যাবে, একসঙ্গে বসবে, সবার সঙ্গে খেলাধুলা করবে। তিনি বলেন, এই খেলাধুলার ভেতর দিয়ে তাদের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা রয়েছে, সেটাকে যেভাবে বিকশিত করা যায় সেই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে এর মূল শক্তিটাই হবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। জাতির পিতা বলেছিলেন, এই বাংলাদেশ আমাদের সোনার দেশ। তাই তিনি সোনার বাংলা করতে চেয়েছিলেন। আজকের এই শিশুরাই সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ার কারিগর।
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলা গঠনের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর থেকে নির্দেশনা বাস্তবায়নের আলোকে কতিপয় পরামর্শ উপস্থাপন করছি।

প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ: যেকোনো পেশাকে তার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে হলে, দক্ষ, অভিজ্ঞ, মেধাবী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের বিকল্প নেই। বিশেষ করে শিশু শিক্ষায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষায় অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে বারবার হোঁচট খাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। এতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়ন ব্যর্থ হচ্ছে। নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা অন্য মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে খানিক সময় থেকে সফলতা বয়ে আনতে পারছে না। তারা মেধা সম্পন্ন কর্মকর্তা হলেও অভিজ্ঞতার অভাবে শিশুশিক্ষা আজও কিন্ডারগার্টেন, সরকারি-বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষা ট্রেনিংবিহীন শিক্ষক দিয়ে গোজামিল দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। শিশুশিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তার প্রয়োজন বিষয়টি তাদের উপলব্ধিতে আসছে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগবিধি প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিহীনদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ অনভিজ্ঞ প্রশিক্ষণবিহীন কর্মকর্তা প্রধানশিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা শিশুশিক্ষার অগ্রগতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন, প্রাথমিক শিক্ষায় স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস। প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন পদে নিয়োগ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেবল সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এতে গড়ে উঠবে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন তথা শিশুবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষক, পিতা-মাতার মর্যাদা সবার ওপরে। এতে শিক্ষকদের বস হবেন শিক্ষক। এতে শিক্ষকদের মর্যাদাও সমুন্নত হবে।

শিশুর খেলাধুলার সুযোগ নিশ্চিত করা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান সময়সূচি শিশুর খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ হরণ করে চলেছে। শিখন ঘাটতি নামে শিক্ষার্থীর ওপর দৈনিক স্বল্প সময়ের সাতটা পিরিয়ড রেখে বড় ধরনের শিখন ঘাটতি বৃদ্ধি করে চলছে। এ স্বল্প সময়ের শ্রেণির কার্যক্রমে শিক্ষকের আসা-যাওয়া নাম ডাকা কিঞ্চিত সময় কুশলাদি বিনিময় শেষে পাঠের আলোচনা ও মূল্যায়নের সময় সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে শিখন ঘাটতি জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। শিক্ষার্থীরা হয়ে ওঠে নোট-গাইড কোচিং-এর প্রতি অনুরাগী। বাড়িতে পড়ার চাপ বেশি থাকে। 
খেলাধুলা বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল শিশুর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন। এতে শীতকালে দিবা শেষে স্কুল থেকে আসা ও গ্রীষ্মকালে গরমে তীব্রতা থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে সময়সূচি ১১টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে প্রচণ্ড তাপে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। শিখন ঘাটতি দূর করা গৃহশিক্ষক নোটগাইডকে বিদায় জানানোর প্রয়াসে বিদ্যালয়ের প্রতিটি পিরিয়ড ১ ঘণ্টা হওয়া প্রয়োজন। যাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দৈনিক পাঠের মূল্যায়ন করতে পারে। নাম ডাকা ব্যবস্থা ৫/১০ মিনিট সময় ব্যয় হয়। প্রচলিত নাম ডাকার বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর শিট টেবিলে থাকা প্রয়োজন। শ্রেণির মনিটর এ ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব পালন করবে। তাহলে পাঠদানের সময় কিছুটা হলেও বাঁচবে। প্রতিদিনের পড়া শিক্ষার্থীর শেখার সুযোগ থাকলে শ্রেণি তথা বিদ্যালয় হয়ে উঠবে শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক থাকবে লেখাপাড়া বিষয়ে ভাবনাহীন। অপরদিকে, দুপুর ২টার আগে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শেষ হলেও শিক্ষার্থীর দুপুরবেলা গোসল বা হাতমুখ ধুয়ে গরম খাবার খেয়ে বিশ্রাম বা ঘুমাবে। বিকাল চারটার পরে শিক্ষার্থী ফুরফুরে মেজাজে সুস্থ দেহ মন নিয়ে খেলতে বা বিনোদন করবে। বাড়িতে খানিকটা পাঠ্য বা গল্পের বই পড়বে, টিভি দেখবে ও ঘুমাবে। 

বিদ্যালয় প্রতিদিন চারটা পিরিয়ডও প্রতিদিন একটা অতিরিক্ত কারিকুলাম বিতর্ক, গল্প, অঙ্কন, কবিতা, আবৃতি, কোরআন তেলাওয়াত, গানসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থাকা প্রয়োজন। এতে পাঠদানের পাশাপাশি আনন্দমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীর শারীরিক মানসিক বিকাশ ঘটবে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে লিখিত সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি পড়ার দক্ষতা অর্জনের জন্য মৌখিক ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন আবশ্যক। বর্তমানে লিখিত মূল্যায়ন মানে ‘যেই লাউ সেই কদুর মতো’। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পূর্বের মতো মূল্যায়নের নামে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর লিখিত ধারাবাহিক মৌখিক জ্ঞান অর্জন মূল্যায়ন করে সার্বিক জ্ঞান অর্জন করিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। 
প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞাননির্ভর প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের শিক্ষক সংকট শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করার প্রয়াসে শীর্ষ প্রশ্ন ফাঁসকারী ও উচ্চপর্যায়ে তাদের প্রশ্রয়কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বে নিয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার সম্পদ তদন্ত করা জরুরি। পরিচ্ছন্ন হোক প্রাথমিক শিক্ষা ও নিয়োগ, বদলি প্রক্রিয়া। 


স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সর্বাগ্রে প্রয়োজন স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস। প্রাথমিক শিক্ষায় অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে সহকারী শিক্ষক এন্ট্রি পদ ধরে শতভাগ নীতি নির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত পদোন্নতি। দুপুর দুইটার বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শেষ করে বিকেল বেলা খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করা। প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক দ্বারা শিশুশিক্ষা বন্ধ করা। সারা দেশের শিশু শিক্ষাব্যবস্থা হোক আনন্দঘন পরিবেশে। সফল হোক প্রধানমন্ত্রীর শিশু শিক্ষার নির্দেশনা।
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ 

জনপ্রিয়