ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ , ১ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

শিক্ষার্থীদের কাঁধে ব্যর্থ রাজনীতিবিদের ভর 

মতামত

প্রশান্ত কুমার কর্মকার

প্রকাশিত: ০০:১০, ৫ আগস্ট ২০২৪

সর্বশেষ

শিক্ষার্থীদের কাঁধে ব্যর্থ রাজনীতিবিদের ভর 

প্রধানমন্ত্রী ছাড়া দেশের একজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারলেন না শিক্ষার্থীদের কথা শোনা উচিত। দেশ প্রেমিক বোদ্ধারা সংস্কার মেনে নিতে অনুরোধ করছিলেন। শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতির দরবারে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের বসে ভালো কি মন্দ নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে করলেন না, করলে হয়তো আজকের পরিণতি দেখতে হতো না। 

দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে বির্তকিত করার আগেই প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে পারতেন। সরকার প্রধান নির্দেশনা দেয়ার পর আপিল বিভাগে তড়িৎ শুনানির ব্যবস্থা করলেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের সরকার কোটা সংস্কার নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলেন। এরপরও শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি করলেন। রাজপথে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে থাকা বিএনপি-জামায়াত শিবিরকে আলাদা কঠিন। সরকারের কঠোর অবস্থানের সুযোগ নিয়ে সহিংস আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এটিই সরকারের চরম ভুল। সেই ভুলের খেসারত কতোদূর যায়, তা সময়ই বলে দেবে। সরকার একটি একটি করে দাবি মানছেন। ছাত্রদের দাবিও বেড়েছে আবার তা এক দফায় রূপ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর করে ব্যর্থ রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছেন। 

যেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, হত্যা নির্যাতনের তদন্ত ও বিচার চেয়ে রাজপথ দখল করে আছেন। ঠিক সেই সময়ে ৬ সমন্বয়কারীদের ডিবি অফিসে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া ছিলো চরম ভুল। প্রধানমন্ত্রী গণভবনের দরজা খোলা রেখেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে চান। নতুন পেনশন ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেছেন। বিকেলে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন। সমবেত মানুষের উদ্দেশে বলা হয়, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এক দফাটি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’ 

প্রধানমন্ত্রী আপনার একজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য একজন দায়িত্ব নিয়ে কথা বলার সাহস রাখেন না। দলের নেতাদের প্রতি তৃনমূল নেতাকর্মীদের আস্থা নেই। সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। সাধারণ মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করতেন। সেই বিশ্বাসের জায়গায় এবার পেরেক ঠুকে দিয়েছেন। আপনার দলীয় নেতারাই আপনাকে ফ্যাসিবাদ বানিয়েছেন। সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো তারা দায়িত্ব নিয়ে সমস্যার চেষ্টা না করে সর্বক্ষেত্রে আপনার মতামতের অপেক্ষায় থাকতেন। 

সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করবো। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা সবার সামনে হাজির করা হবে। আরও ঘোষণা করা হয়, ‘শুধু শেখ হাসিনা নন, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনো কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে। 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এরপর আন্দোলন আরো বেগবান হয়।  আহত হয়েছেন বহু মানুষ। শিক্ষার্থীদের মতে ‘এখন আর আলোচনার সুযোগ নেই। তারা চান সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে। আবার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বিএনপি এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। দেশের সব নেতা-কর্মীদের সেই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছেন। রইল বাকি গত সপ্তাহে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবির। তাদের নেতা-কর্মীরা নিশ্চয় ঘরে চুড়ি পড়ে বসে নেই। সরকার প্রধানের যেকোনো মুলে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে হবে। এইটি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান যে শিক্ষা কারিকুলাম চালু করেছে সরকার। এই কারিকুলামের প্রতি গণ-মানুষের সমর্থন নেই। রাজনীতির সৌন্দর্য হলো বিরোধী মতের প্রতি সম্মান জানানো। সমালোচনাকে প্রধান্য দেয়া। স্কুল পর্যায়ে কারিকুলাম নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে, হচ্ছে সরকার তা কানে তুলছেন না। সরকার ধাপে ধাপে এই কারিকুলাম প্রয়োগ করতে পারতেন। এই কারিকুলাম ব্যবহারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো, সমাজব্যবস্থা, শিক্ষকদের সম্মক ধারণা ও প্রশিক্ষণ না থাকায় ছাত্রদের সঠিকভাবে শেখাতে পারছেন না। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছাড়েননি। কোটা সংস্তার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দিন দিন জোড়ালো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বিবৃতি দিয়েই চলেছেন। এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো-নির্দিষ্ট এজেন্ডা নেই। শিক্ষার্থীদের দাবি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে। তাদের সমন্বিত নেতৃত্ব আছে, কিন্ত একজন নেতা নেই। তাদের হয়ে কথা বলা এক আইনজীবীকে নেতা হিসেবে রাতারাতি হিরো বানিয়ে তুলেছেন। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসুচিতে পুলিশের মুখোমুখি দাঁড়ানো আইনজীবী হয়ে গেলেন তাদের অভিভাবক। বিএনপি এতো বড় একটি রাজনৈতিক দল হয়ে যা পারেনি, তা পেরেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিএনপির আন্দোলনে জনগনের দাবি ছিলো না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ছিলো নির্দিষ্ট দাবি কোটা সংস্কার। কিন্তু এই কোটা সংস্কার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরতে পরতে ঢুকে পড়েছে সমাজের দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, অপশক্তির এজেন্ডা। 

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, পরবর্তীতে তিনিই হলেন স্বাধীনতার ঘোষক। তেমনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের রশি অন্য কারো হাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক যখন বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া। সেই শিক্ষার কী মূল্য! শিক্ষা মানেই সেবা নয়, ব্যবসা। এদেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বুয়েট এবং মেডিক্যালে ভর্তি হন। এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া মেধাবীরা দুর্নীতি মামলার আসামি। সরকারি চাকরিজীবি, আমলাদের বেতন বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিও বেড়েছে। তাদের অভাবে সংসারে ভাত জুটে না। এদেশের আদর্শবান মানুষগুলো বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। অর্থপাচার করছেন। তারা কোন শ্রেণির মেধাবী?  

এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বড় অংশ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী আর অশিক্ষিত ছিলেন, যারা সত্যিকার দেশকে ভালোবেসে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা অবেহেলা, চিকিৎসার অভাবে, অনাহারে মারা গেছেন। কিন্তু একজন রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস চিকিৎসার অভাবে, অনাহারে মারা গেছেন শুনিনি। 
লেখক: আইনজীবী ও সাংবাদিক

জনপ্রিয়