ঢাকা রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

শিক্ষকদের মনোকষ্ট

মতামত

মো. সিদ্দিকুর রহমান

প্রকাশিত: ০০:২০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

শিক্ষকদের মনোকষ্ট

শিক্ষকেরা সমাজ সংস্কারক। তারা অন্ধকারচ্ছন্ন সমাজকে আলোকিত করে থাকেন। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে মানবেতর জীবনযাপন করলেও তারা গড়ে তোলে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। সে জনগোষ্ঠী থেকে বের হয়ে আসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, বড়-ছোট আমলা, ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিচারক উকিলসহ স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। তাদের সৃষ্ট ব্যক্তিবর্গ দেশ বিদেশে ও সমাজের সর্বস্তরে অবস্থান। অথচ আমাদের দেশের শিক্ষকসমাজ রাজনৈতিক বলয়ে বেড়ে উঠেছে। চরম নির্যাতনে আজ তারা জর্জরিত। শিক্ষকসমাজ যে জনগোষ্ঠীকে আলোকিত করে, অথচ তাদের কিছু হলে সারা দেশে হৈ-চৈ তথা আন্দোলনে মুখরিত হয়ে থাকে।

অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা আসার পর হতে শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মারধর, হাতুড়ি পেটা, জুতার মালা পরিয়ে বের করে দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। শিক্ষকেরা এ সমাজেরই মানুষ। তাদের দোষ-ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে বিচার না করে শিক্ষার্থী তথা বখাটে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী দিয়ে মতাদর্শের কারণে তাদের অপমান করা কাম্য নয়। রাষ্ট্রের সচিব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বস্তরের কর্মচারী, যখন যে সরকার আসে, তাদের আনুগত্য বা চামচামি করা ছাড়া তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন নির্বিঘ্নে করতে পারেন না। বর্তমান দেখা যাচ্ছে, সর্বত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সেজে প্রায় সব সংগঠন বৈষম্যেবিরোধী সাইনবোর্ড লাগিয়ে তাদের রূপ পাল্টাচ্ছে। এ ছাড়া আমরা প্রায় সবাই সোনার বাংলা, নতুন বাংলাদেশ, বাষ্ট্রপতি এরশাদের বাংলাদেশ, বিএনপির বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশের জন্য কাজ করে আসছি। কার কয়টা মাথা আছে বিপরীতে স্রোতে শির উঁচু কর পেশাগত কাজ চালিয়ে যাবে। শিক্ষকেরা তো এই সমাজের অংশ। পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্যরা যে দল বা গোষ্ঠীর শিক্ষকেরা বা সরকারি কর্মচারীরা তার অনুগত না হলে স্বাভাবিকভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা দুরূহ। যেমন ‘রাজার ইচ্ছায় নৃত্য, কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন’-এই মুহূর্তে মনের মাঝে একটা গানের কলি বেজে উঠলো- যেমনে নাচায়, তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ? 

প্রজাতন্ত্রের শিক্ষক, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমলা কেউ যাতে বাতাসের তালে তালে নাচতে না হয়। এ সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। বিধি প্রণয়ন করতে হবে যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা শুধু বিধিবহির্ভূত কাজ করলে অপরাধ হবে। কোনো কর্তার বিধিবর্হিভূত নির্দেশ অমান্য করলে অপরাধী নয়। ঘুষ যেমন দেয়া-নেয়া সমঅপরাধ। তেমনি চাকরি, বদলি, পদোন্নতি সুপারিশ বেআইনি বলে গণ্য হোক। কোনো হোমরা-চোমরা, রাজনৈতিক ব্যক্তি, এমপি, মন্ত্রী প্রশাসনের ওপর কোনো ব্যক্তি চাপ বা সুপারিশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হোক। 

এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বাগ্রে ম্যানেজিং কমিটির নাম বাতিল করে কল্যাণ সমিতির নামকরণ করা প্রয়োজন। যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনায় প্রভুত্বমূলক মানসিকতার পরিবর্তে কল্যাণ করার প্রয়াস জাগ্রত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল শ্রেণির একজন করে অভিভাবক, সকল শিক্ষক, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কল্যাণ সমিতি। প্রধান শিক্ষক সভাপতি থাকবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামত ও বিধি নিষেধের আলোকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। 

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, বল প্রয়োগ করে শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়া দৃষ্টিকটু। তিনি শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও হেনস্তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, লক্ষ্য করা গেছে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও  নানাভাবে হেনস্তার ঘটনা ঘটছে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ৩ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা কালে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে, পুনরায় এই আহ্বান জানান তিনি। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ আছে তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। 

বেআইনি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংঘঠিত হলে তার প্রতিকারের জন্য ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, যাদের হাত ধরে আজকে আমার এই অবস্থান তারা হলেন সম্মানিত শিক্ষক। এই শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগসহ অপমান করে বের করে দেয়া জাতির জন্য মঙ্গল নয়। তিনি বলেন, শিক্ষক অপরাধ করলেও শিক্ষার্থী বা যে কেউ তাকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া, পদত্যাগে বাধ্য করা, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াও অপরাধ। কোনো নির্দোষ ব্যক্তি বিনা অপরাধে অপমানিত হওয়া ও পদত্যাগ করানোও অপরাধ। তিনি প্রশাসন তথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। শিক্ষা উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আহ্বান করলেও, যথাযথ ইতিবাচক ফলাফল দৃশ্যমান নয়। এ প্রেক্ষিতে কতিপয় সুপারিশ উপস্থাপন করা হলো। 

শিক্ষকদের অপমান করে বের বা পদত্যাগ বাধ্য করানো শিক্ষার্থী বা অন্য যে কেউ হোক, তাদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তির ব্যবস্থা করা।

শিক্ষকদের সম্মানের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে এনে, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া।

রাজনৈতিক বলয় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষকদের মুক্ত রাখার প্রয়াসে বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা। 

শিক্ষকরা দেশ ও জাতি গড়ার কারিগর। চরম অপমানে আজ তাদের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত। এই অবস্থা দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত। শিক্ষকদের তাদের মর্যাদা ফিরে পেতে হলে অহেতুক তেল মারা বন্ধ করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে দূরে থাকতে হবে। তারা দেশ ও জাতির সম্মানিত ব্যক্তি। সকল শিক্ষকের মর্যাদা হোক প্রথম শ্রেণির। শিক্ষকের আজকের দিনে মনোকষ্ট হলো এই অপমান ঘৃণ্য কর্মের প্রতিবাদে শিক্ষক সমাজের নীরবতা। সকলের সঙ্গে শিক্ষকরা যেনো তাদের অপমান হা করে গিলছে। চেতনা ফিরে আসুক শিক্ষকদের, সঙ্গে জাতির-এই প্রত্যাশা।
 লেখক: শিক্ষাবিদ
 

জনপ্রিয়