ঢাকা রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য লিপিবদ্ধ জরুরি

মতামত

শেখ মোহা. শাহিনুল আলম

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য লিপিবদ্ধ জরুরি

কোনো দেশের আত্মপরিচয়ের দালিলিক প্রমাণ হলো সংবিধান। এর সম্মান এবং স্বীকৃতি সর্বজনতার হৃদয়ের স্পন্দন। কেমনভাবে দেশ চলবে সংবিধান তারই পথনির্দেশক। কোনো দেশের সংবিধান ঐশী বাণী নয় তাই পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন হয় যুগে যুগে কিন্তু মৌলিক বিষয় অপরিবর্তিত থাকে।

বাংলাদেশে অভ্যূদয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার পর থেকে শুরু হওয়া ঐতিহাসিক যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ বলে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধমুক্ত পৃথক রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ নামে বিশ্ব দরবারে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। লড়াকু হিসেবে এই জনগোষ্ঠীর সম্মান ও গৌরব পরীক্ষিত। নিশ্চয় সংবিধান রচিত এবং স্বীকৃত দেশ স্বাধীনের পরেই। ঐক্যবদ্ধ ত্যাগী জনতার অবদান রাজনৈতিক ময়দানে সরব কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং দালিলিক স্বীকৃতি সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়নি। সংবিধানে শুধুমাত্র একটি স্থানে দ্বিতীয় ভাগ ৯ ধারায় জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ শব্দ এবং সেকেন্ড সিডিউল ২নং প্রস্তাবনায় (১) প্রথম অনুচ্ছেদে ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।

এটা ছাড়া বিদ্যমান সংবিধানে কোথাও মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির স্থান হয়নি। বিষয়টি বেশ জটিল এবং প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের সংবিধানে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রম হানী, বীরশ্রেষ্ঠদের নামটুকুর স্থান হয়নি। বড়ই পরিতাপ এবং হতবাক হতে হয় যাদের ঘাম, প্রাণ, রক্ত দিয়ে পাওয়া দেশ তাদের কথা ঐতিহাসিক নথিতে নেই। দেশের সংবিধান অনেকবারই সংযোজন বা কাটাছেঁড়া বা পরিবর্তন হয়েছে শুধুমাত্র ক্ষমতায় আসা এবং অন্যকে আসতে না দেয়া, অনন্তকাল ক্ষমতায় টিকে থাকার বিষয় নিয়ে এবং নিজেদের রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে নেয়ার সংশোধন। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা শ্লোগান শুধুমাত্র রাজনীতির হাতিয়ার। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সংবিধানে লিপিবদ্ধের সুযোগ ছিলো কিন্তু সেই সুযোগ উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশের বিদ্যমান সংবিধান নতুনভাবে রচিত বা সংস্কার প্রস্তাবনার পরিকল্পনা চলছে। অনেক ঘাটতি হয়তো পূরণ হবে। নিশ্চয় ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের নতুন স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটের তথ্য থাকবে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্তারিত তথ্য সংবিধানে রাখতে অনুরোধ করা নিশ্চয় অপরাধ নিবেন না।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস বিগত ৫৩ বছর যেভাবে পাঠ্যক্রমে পড়ানো হয়েছে, সংবিধানটি পড়ে দেখে হতাশ, সেখানে এ প্রসঙ্গে তথ্যশূন্য। বিশ্বে কোনো বিপ্লব কোনো রাজনৈতিক দল করেনি, অনুরূপ বাংলাদেশেও নয়। ১৯৭১ বা ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের বিপ্লব কোনো দলীয় আয়োজনে নয় বরং তা সর্বজনতার। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের স্বাধীনতা সংগ্রাম যদি কোনো রাজনৈতিক দল একক দাবীদার হয় তা জনতার অধিকারের দখলদারিত্ব। দেশকে কোনো দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ‘দল যার যার, দেশ সবার’ নীতিতে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রীয় সংবিধান যেনো দলীয় সংবিধান না হয়, এটাই জনতার প্রত্যাশা।

লেখক : অধ্যক্ষ, আলাউদ্দিন আহমেদ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কুষ্টিয়া

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

জনপ্রিয়